টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার চাপাইত গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য পিনা নেকলা। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ১০০ পদের বিপরীতে মোট ৩ হাজার ৭২২ জন আবেদন করেছিলেন। ২০ মার্চ থেকে যাচাই বাচাই শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে শনিবার রাতে লিখিত ও মনস্তাত্বিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মেডিক্যাল টেস্ট করা হবে। পরবর্তীতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে চূড়ান্ত মেডিকেল টেস্ট করিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।
পিনা নেকলা বলেন, ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। সেই ইচ্ছা থেকে পুলিশে আবেদন করি। অনেকের কাছে শুনেছি ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। তবে ঘুষ ছাড়াও যে পুলিশে চাকরি হয় তার প্রমাণ আমি নিজেই। আগামীতে দেশের স্বার্থে মানুষের সেবা করার জন্য সবার দোয়া চাই।
পুলিশ সদস্য কনস্টেবল পদে চাকুরি পাওয়া সদর উপজেলার শাকিল আহমেদ বলেন, অনেকেই বলতো পুলিশের চাকরি পেতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লাগে। তারপরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে আবেদন করে নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। আমি যে রকম বিনা পয়সায় চাকরি পেয়েছি, সে রকম আমিও টাকা ছাড়া মানুষকে সেবা দেব। এ জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
শাকিলের মা সাহিদা বেগম বলেন, খুব কষ্টে মানুষ হওয়া আমার ছেলেটি পুলিশের চাকরি পেয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। আমার শাকিল যাতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এ জন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করি।
নাগরপুরের মোকনা গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, গত মাঠেও আমি ওয়েটিং লিস্টে ছিলাম। এবার চাকরি পাওয়ায় আমি খুবই খুশি। সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া আমার একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। গতবার ভেবেছিলাম ঘুষ না দেওয়ায় হয়তো আমার চাকুরি হয়নি। এবার চাকুরি পাওয়ার পর প্রমাণ হলো পুলিশের চাকরিতে কোনো ঘুষ লাগে না।
সখীপুরের লাবন্য সরকার বলেন, পরিবারের হাল ধরতে আমার একটি চাকরি খুব প্রয়োজন ছিলো। পুলিশের এই চাকুরিটি আমার জন্য অনেক উপহার হয়েছে। এখন পরিবারের পাশাপাশি দেশের মানুষের পাশেও দাঁড়াতে পারব।
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, আইজিপি স্যারের উদ্যোগে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কনস্টেবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, শুধু টাঙ্গাইল জেলা নয়, সারাদেশেই পুলিশ সদস্য নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। মেধার ভিত্তিতেই যাচাই বাছাই করা হয়েছে। মানুষের ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকেই প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত যোগ্য প্রার্থীদের কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন এবং দালাল চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ না করার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ১০ এপ্রিল, ২০২২
এমএমজেড