নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে চোরাই চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
গ্রেফতাররা হলেন- রায়হান, মো. বিল্লাল, ফারুক, মোতালেব, কাউসার, পারভেজ এবং সোহেল।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছরের ৫ মে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক এলাকার ফেইম অ্যাপারেলস লিমিটেড তাদের তৈরি পোশাক শিপমেন্টের জন্য বিবি খাদিজা ট্রান্সপোর্ট ও ইম্পেরিয়াল ট্রান্সপোর্টের চারটি কাভার্ড ভ্যান ভাড়া করে। ওই কাভার্ডভ্যানে ফেইম অ্যাপারেলস ১ লাখ ১৮ হাজার ৩২৯ পিস তৈরি পোশাক চট্টগ্রাম পোর্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ট্রান্সপোর্টের নিয়োজিত চালক ও হেলপারদের মাধ্যমে রাতে প্রেরণ করে। চট্টগ্রাম পোর্টের সিঅ্যান্ডএফ কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৯ জুলাই ফেইম অ্যাপারেলস কর্তৃপক্ষ জানতে পারে প্রেরিত কাভার্ডভ্যানে শিপমেন্টকৃত তৈরি পোশাকের মধ্যে ৩০ হাজার ৫৪৩ পিস পোশাক কম আছে। পরে ফেইম অ্যাপারেলসের পক্ষে মো. জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ১৩ জুলাই ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এই বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটির দায়িত্ব পায় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ।
পিবিআই তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকার মিরপুর, সাভারের বিরুলিয়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু ও ফটিকছড়ি এলাকায় গত ৩১ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল একাধিক অভিযান পরিচালনা করে চোরাই চক্রের মূলহোতাসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, গ্রেফতাররা রায়হান চক্রের সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছিল। গার্মেন্টের ভাড়াকৃত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভারদের সুকৌশলে আসামি রায়হান বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসতেন। আসামি রায়হান প্রতিটি চোরাই কাজের জন্য একজন ড্রাইভারকে ২০ হাজার টাকা দিতেন।
তিনি আরও জানান, গার্মেন্টস থেকে কাভার্ডভ্যানে শিপমেন্টের মালামাল উঠলে আসামি রায়হান পরস্পর যোগসাজসে পূর্ব-নির্ধারিত ভাড়া করা গোডাউনে কাভার্ডভ্যান নিয়ে আসে। এরপর তারা অতি অল্প সময়ে দ্রুততার সঙ্গে পূর্ব থেকে ঠিক করে রাখা লেবার দ্বারা কাভার্ডভ্যানের সিল ট্যাগ অক্ষত রেখে কাভার্ডভ্যানের দরজার সিটকানির নাট খুলে গার্মেন্টেস পণ্যের এক তৃতীয়াংশ মালামাল নামিয়ে রাখে। প্রতিটি ট্রাক গোডাউনে প্রবেশ করিয়ে মালামাল সরানো বাবদ আসামি বিল্লাল ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চোরাই কাজে সহযোগিতা করার জন্য রাজি হয়। আসামি বিল্লাল গ্রেফতারের আগে তার ভাড়াকৃত গোডাউনে গড়ে প্রতি মাসে এমন ৫-৬ টি চোরাই কাজ সম্পন্ন করতেন।
তিনি বলেন, আসামিরা কার্টনে রাখা মালামালের ওজন ঠিক রাখতে সম পরিমাণ গার্মেন্টেস ঝুট ঢুকিয়ে পুনরায় তা প্যাকেজিং করে কাভার্ডভ্যানে উঠিয়ে দিতেন। সোনারগাঁয়ে আসামি বিল্লালের ভাড়াকৃত গোডাউনে কাভার্ডভ্যান থেকে নামিয়ে রাখা মালামাল পরবর্তীতে আসামি রায়হানের মাধ্যমে চক্রের মধ্যস্ততাকারী আসামি কাউসারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হতো। মামলাটি তদন্তকালে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার ও মাতুয়াইল এলাকায় কাভার্ডভ্যান থেকে মালামাল সরানোর কাজে ব্যবহৃত এমন একাধিক গোপন গোডাউনের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্যসমূহ চক্রের মূলহোতা আসামি সোহেল পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিমানযোগে পেনাং, হাংকুয়া ও কুয়ালালামপুর পাঠিয়ে দিতেন।
পিবিআই মামলাটি তদন্তকালে আসামি সোহেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৮ এপ্রিল তার মিরপুরে অবস্থিত গোপন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্য জব্দ করা হয়। ওই বিষয়ে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ বাদী হয়ে চক্রের মূলহোতা সোহেলকে আসামি করে গত ৯ এপ্রিল পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত চোরাই চক্রের অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতার এবং ঘটনার কাজে জড়িত কাভার্ডভ্যান উদ্ধারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
এমআরপি/এএটি