ঢাকা: হায় হায় আমার সন্তানের এখন কী হইবো, কেমনে চিকিৎসা করামু। আমিতো মাছ টোকাইয়া খাই আর সংসার চালাই।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ে সোনিয়ার (৯) জন্য আর্তনাদ করে এভাবেই আক্ষেপের কথাগুলো বলছিলেন মা রেখা আক্তার।
রোববার (১০ এপ্রিল) বিকেলের দিকে মগবাজার মীরবাগ থেকে মেয়ে সোনিয়াকে নিয়ে মালিবাগের এক বাসায় সাহায্য আনতে যাচ্ছিলেন রেখা আক্তার। যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা নতুন বিদ্যুতের একটি খুঁটি গড়িয়ে এসে সোনিয়ার ডান পায়ে লাগে। এতে সোনিয়ার ডান হাটু থেকে গোড়ালির ওপর পর্যন্ত পুরো থেঁতলে যায়। আঘাতের স্থানটি থেকে স্পষ্টভাবে হাড় দেখা যাচ্ছিল। এ অবস্থায় সোনিয়াকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর বয়ারচর গ্রামের কৃষক শান্ত মণ্ডলের মেয়ে সোনিয়া। বর্তমানে সে তার মা রেখার সঙ্গে মগবাজার নয়াটোলা মীরবাগ স্বপ্নগুলি মাসুম মিয়ার একটি টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকে।
রেখা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। সোনিয়ার বাবাও দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। তিনি এখন গ্রামেই থাকেন। আমি কারওয়ান বাজারে আড়তে মাছ টোকাই, যা পাই তা বিক্রি করে সংসার চালাই। আমার পাঁচ সন্তান। সোনিয়া হচ্ছে দ্বিতীয়। বড় মেয়ে সাথী তার বাবার সঙ্গে গ্রামে থাকে। সোনিয়াসহ বাকি চার শিশু সন্তান নিয়ে আমি মীরবাগে থাকি।
হাসপাতালে আর্তনাদ করে চিকিৎসকদের রেখা আক্তার বলেন, আমার এখন কী হইবো, আমি গরিব মানুষ, আমার মেয়ের পা ঠিক হইবো তো? আমি মাছ টোকাইয়া খাই। আমার কাছে চিকিৎসা করার মতো টাকা-পয়সা নাই। কেমনে আমার মেয়ের চিকিৎসা করামু?
রেখা জানান, মীরবাগে বাসার কিছুটা সামনে সোনিয়াকে নিয়ে এক বাড়িতে সাহায্য আনতে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা সিমেন্টের একটি বিদ্যুতের খুঁটি গড়িয়ে সোনিয়ার পায়ে এসে লাগে। এতে তার মেয়ের ডান পা থেঁতলে যায়। চামড়াসহ মাংস উঠে গেছে, হাড় দেখা যাচ্ছে।
রেখা আক্তারের ছোট ছোট আরও দুই সন্তানকে প্রতিবেশীদের কাছে রেখে দেড় বছরের হোসেনকে কোলে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসেন। সঙ্গে ছিলেন সোনিয়ার মামা শুকুর আলী (রেখার ভাই) ও শেফালী নামে প্রতিবেশী এক নারী।
ঢামেক জরুরি বিভাগ অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে চিকিৎসক বাংলানিউজকে বলেন, শিশু সোনিয়ার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা লাগবে। তাকে আরও পরে প্লাস্টিক সার্জারিতে পাঠানো হতে পারে। যেহেতু তার পায়ে আঘাতের জায়গায় চামড়া-মাংস কিছুই নেই, তবে এক্সরে করে দেখা গেছে পায়ের হাড় ঠিক আছে।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, সোনিয়াকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে, এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। শিশুটির পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
শিশুটির মামা শুকুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সোনিয়াকে চিকিৎসা করাচ্ছি। চিকিৎসকরা খুব ভালোভাবে দেখছেন। আমাদের কোনো টাকা পয়সা দিতে হয়নি। কিন্তু সোনিয়ার জন্য রক্ত, স্যালাইন, কিছু ওষুধ, বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ-ছয় হাজার টাকা চলে গেছে।
তিনি বলেন, আমার ভাগ্নি সোনিয়ার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আমরা গরিব মানুষ, এতদিন চিকিৎসা চালাইবার জন্য প্রয়োজন মতো টাকা পামু কই? অ্যাহন আমাগো পাশে কে দাঁড়াইবো?
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সোনিয়ার জন্য কিছু করা যায় কিনা আমরা সেই চেষ্টা করবো। আমাদের হাসপাতালে সমাজ কল্যাণের অফিস আছে, সেখান থেকেও মানবিক আবেদনের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যাবে। এছাড়া সোনিয়ার যাবতীয় ওষুধসহ সব চিকিৎসা ঢামেক হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
বৈদ্যুতিক খুঁটির আঘাতে সোনিয়ার পা থেঁতলে যাওয়ার বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ ব্যাপারটি অবগত নই, তবে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
এজেডএস/এসআরএস