ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদ যাত্রায় নৌরুটে ভোগান্তির শঙ্কা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
ঈদ যাত্রায় নৌরুটে ভোগান্তির শঙ্কা ফাইল ফটো

মাদারীপুর: বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরির সংখ্যা কম থাকা এবং শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা চলাচল করায় এবার ঈদে ঘরে ফিরতে ভোগান্তিতে পরতে পারেন বলে শঙ্কা করছেন যাত্রীরা। ঈদে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো এবং ২৪ ঘণ্টা ফেরি চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বর্ষা মৌসুমে জুলাই ও আগস্ট মাসে পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে কয়েক দফায় পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চার বার ফেরির ধাক্কা লাগে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর পাইল ক্যাপ। এই পরিস্থিতিতে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ১৮ আগস্ট দুপুরের পর থেকে এই নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর কয়েক দফায় সীমিত আকারে ফেরি চালু হয় এবং বন্ধও করা হয়।

এরপর শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দি ঘাটে স্থানান্তর করা হয় ফেরিঘাট। দিনের বেলা মাত্র ২টি ফেরি চলে মাঝিকান্দি রুট দিয়ে। এদিকে গত বছর ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ‌ছোট ছোট ৫টি ফেরি দিয়ে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রী পারাপার শুরু করা হয়।

যাত্রীরা জানান, নৌরুটে ফেরি পারাপার হতে বাংলাবাজার ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ফেরির সংখ্যা কম এবং সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফেরি চলাচল করায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন পারাপার হতে ব্যর্থ হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে বসে থেকে বিকেল হয়ে গেলে বিকল্প রুটে চলে যেতে হয় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসা যাত্রীদের। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের।

প্রাইভেটকার চালক মো. জামাল হোসেন বলেন, ঘাটে গাড়ির চাপ কম থাকলে দ্রুতই ফেরিতে ওঠা যায়। আর ফেরিতে উঠতে পারলে পদ্মা পার হতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু ফেরিতে উঠতে পারাটাই চ্যালেঞ্জ। ঈদে এমনিতেই যাত্রীর চাপ বাড়ে। এসময় ফেরির সংখ্যা ও চলাচলের সময় না বাড়ালে ভোগান্তি বাড়বে।

অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. জহির জানান, ঘাটে রোগী পারাপারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রয়েছে। তবে ঈদে ফেরি না বাড়ালে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পারতে হবে। কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরি সার্ভিস বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নামে। লঞ্চ, স্পিডবোট এবং ফেরিতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। ঈদ মৌসুমে নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোটের পাশাপাশি ফেরিতেও যানবাহন ও যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকে।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে আরও জানা গেছে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে বর্তমানে শুধু দিনের বেলায় ফেরি সার্ভিস চালু রয়েছে। বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রো রোসহ মাত্র ৫টি ফেরি চলে। এছাড়া মাঝিকান্দি-শিমুলিয়া রুটে চলে ২টি ফেরি। দুই নৌরুটে মোট ৭টি ফেরি দিনের বেলা চলাচল করছে। গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেলে বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। টার্মিনালে সিরিয়ালে থাকতে হয় যানবাহনগুলো। তবে নৌরুটে ব্যক্তিগত যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, রোগীবাহী গাড়িসহ ছোট যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস পারাপার বন্ধ আছে নৌরুট দিয়ে।

বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই লঞ্চগুলো প্রস্তুত রয়েছে। ধারণক্ষমতা মেনেই লঞ্চে যাত্রী পারাপার করা হয়ে থাকে। ঈদ মৌসুমে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।  

লঞ্চে পার হওয়া যাত্রীরা বলেন, পদ্মা পার হতে লঞ্চে বেশি সময় লাগে না। তবে বাতাস থাকলে মাঝপদ্মায় বেশ ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। ঈদের আগে লঞ্চে যেন গাদাগাদি করে পার না করা হয় সেদিকে প্রশাসনের নজর রাখা জরুরি।

বিআইডব্লিউটিএর মেরিন কর্মকর্তা (শিমুলিয়া ঘাট) আহমদ আলী বলেন, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত আগের নিয়ম অনুযায়ী ফেরি চলাচল করছে।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দীন আহমেদ জানান, ঈদকে সামনে রেখে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরি সার্ভিস বাড়ানোর বিষয়টি জানিয়েছি। বর্তমানে বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি মিলিয়ে দিনের বেলা ৭টি ফেরি চলছে। সন্ধ্যার পর বাংলাবাজার রুট বন্ধ থাকলেও মাঝিকান্দি রুটে ফেরি চালু থাকে। তবে মাঝিকান্দি রুটে গাড়ি চলাচলের সড়ক তেমন উন্নত নয়। ফলে সড়কেই গাড়ি আটকে থাকে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ঈদের আগে ব্যবস্থা নিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।