রাজশাহী: মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়া অন্তরা খাতুনের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আব্দুল জলিল।
বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের চণ্ডীপুর বড় ছয়ঘটি গ্রামের অদম্য মেধাবী ওই ছাত্রী এবারের ভর্তি পরীক্ষায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে তার ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসেন এলিট ফোর্স র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ারও।
অন্তরা খাতুন জানান, ছোটবেলায় তার বাবা দুরারোগ্য ব্যধিতে মারা যান। মা রসুনা বেগম অন্যের বাড়িতে ও ভাই সোহেল রানা রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনোভাবে সংসার চালান। এর মধ্যেই চলে তার লেখাপড়ার খরচও।
তিনি বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শাহদৌলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। এবার সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তার এই খবর জানতে পেরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি, বই কেনা ও অন্যান্য খরচ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসক তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন বলে জানান। এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, অন্তরা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে তিনি আজ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তার এ সাফল্য অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এজন্য অদম্য এই মেধাবীকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে। এ টাকা দিয়ে তিনি ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দরিদ্র তহবিল থেকে তাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিববর্ষের ঘরও দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
বাঘা উপজেলার হত-দরিদ্র পরিবারের মেয়ে অন্তরা খাতুনের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছেন র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ারও। তার নির্দেশে এরই মধ্যে চন্ডীপুর গ্রামে অন্তরার বাড়িতে গিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সব ধরনের খরচ পৌঁছে দিয়েছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারুফ হোসেন খাঁন।
র্যাবের সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অন্তরার মা রসুনারা বেগম।
তিনি বলেন, অন্তরার বাবা দীর্ঘ ১৮ বছর আগে দুরারোগ্য ব্যধিতে মারা যান। পরে তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও তার ছেলে সোহেল দিনমজুরি করে সংসার চালানোর পাশাপাশি অন্তরার লেখপড়ার খরচ যোগান দিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় তারা অন্তরার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়ার আনুষাঙ্গিক ব্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। ঠিক এই সময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক এবং র্যাব-৫ এর অধিনায়ক তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমন কিছু তাদের কল্পনায়ও ছিল না। তাই তিনি তাদের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অন্তরার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য সবার কাছেই দোয়া চান।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, র্যাব-৫ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে মানবতার কল্যাণেও কাজ করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি সেই দরিদ্র মেয়েটির মেডিক্যালে ভর্তির সব ধরনের খরচ তার বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন।
ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানান র্যাবের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন>>মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেলেও অন্তরার লেখাপড়া অনিশ্চিত
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
এসএস/এএটি