ঢাকা: ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া ঢাকা ওয়াসার মিটার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে থাকা মো. মহিউদ্দিন আরিফ ও ওয়াসার এক অফিস আদেশে বরখাস্ত হন ড্রেনেজ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার ওয়াসা ভবনের সামনে ওয়াসার কর্মচারীরা মানববন্ধন করেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ঢাকা ওয়াসার চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন ঢাকা ওয়াসার মিটার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে থাকা মো. মহিউদ্দিন আরিফ। নিয়ম অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা তার তিন মাসের বেতন অগ্রিম প্রদান করে ৫ জানুয়ারি তার অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করেন। এর কিছু দিন পর আবার স্বপদে বহাল চেয়ে আবেদন করেন আরিফ।
২৫ মে ওয়াসা আরেক আদেশে জানায়, চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন প্রত্যাহারের বিষয়ে বিবেচনার কোন সুযোগ নেই।
এছাড়া ওই মানববন্ধনে অংশীদার ড্রেনেজ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক। গত ৪ জুলাই ওয়াসার এক অফিস আদেশে বরখাস্ত হন তিনি।
তাদের দাবিগুলো: ১. জব সিকিউরিটি, পেনশন সুবিধাসহ বিদ্যমান সব সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের নামে একজন কর্মীকেও চাকরিচ্যুত করা যাবে না। ২. ঢাকা শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা ওয়াসার সাংগঠনিক কাঠামো সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগী করার মাধ্যমে কর্মীদের কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে হবে। ৩. প্রতিষ্ঠানের প্রতি স্বত্ত্বাধিকার ও দায়বদ্ধতা না থাকায় আউটসোর্সিং ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। শূন্যপদে নিয়মিত কর্মী নিয়োগ দিয়ে ওয়াসার কর্মশক্তি ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক যুগেরও অধিক সময় ধরে কর্মরত মাস্টাররোল কর্মীদের নিয়মিত করতে হবে। ৪. জ্যেষ্ঠতা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার বিধি-বিধান যথাযথ অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ বিশেষ দুর্নীতিপ্রবণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের শিথিলতা প্রত্যাহার করে আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমানভাবে করতে হবে। আইনের আশ্রয় লাভের মৌলিক অধিকার সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। ৫. কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন তাদের স্বার্থের অনুকূলে করতে হবে। কর্মরত অবস্থায় কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী মারা গেলে সরকারি বিধানমতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক জোরজবরদস্তিভাবে দখলকৃত ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ২শ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ সমিতির নির্বাচিত কমিটিকে বুঝিয়ে দিতে হবে। ৬. আইনসঙ্গত এবং যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই সময়িক বরখাস্ত এবং ওএসডি হিসেবে থাকা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তাদের পদায়ন করতে হবে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হয়নি। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘ওয়াসায় আমাদের জব সিকিউরিটি নেই। এখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে সাসমেন্ট করা হয়। এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত না ওয়াসা ম্যানেজমেন্ট আমাদের দাবি মেনে না নেয়, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ’
সমিতির অর্থ লোপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমিতির বিষয়ে অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ১৩২ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। যারা লুট করেছে তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। '
অফিস আদেশে দেখা যায়, সংস্থাটির চাকরি প্রবিধানমালা ২০১০ এর ৩৮ (খ) অনুয়ায়ী সংস্থাটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনুমতি ব্যতিত গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আগে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ওয়াসা। কিন্তু তাকে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা চাকরি প্রবিধানমালা ২০১০ এর ৩৮ এর ক ও খ প্রবিধি অপরাধের অভিযোগে গত ২২ মার্চ সংস্থাটির রাজস্ব জোন-১ এর রাজস্ব পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। তিনিও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, সমিতির আগের কমিটি থেকে দায়িত্ব গ্রহণের সময় সমবায় অধিদপ্তর ১৩২ কোটি টাকার হিসাব মিলাতে পারেনি। তখনকার সভাপতি মারা গেছেন। এর কারণে প্রকৃতি হিসেবে সমবায় অধিদপ্তর বের করতে পারেনি। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিস্বার্থ আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে।
সূত্রে জানায়, সমিতির অর্থ লোপাট হয়েছে এমন দাবিতে কর্মচারীদের একাংশ সমিতির কর্তৃত্ব চায়। তারাই তাদের সমর্থকদের নিয়ে এ মানববন্ধনে ডাক দিয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সমবায় সমিতির জন্য কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে, বিষয়টা সে রকম না। যারা ওয়াসা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওয়াসার আইন অনুযায়ীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। '
তিনি বলেন, সমিতির অর্থ লোপাটের বিষয়টি ওয়াসার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। বাকি দাবিগুলো ওয়াসা তার আইনানুযায়ী মেনে চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২২
এমএমআই/এএটি