ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় ৪ বছর বন্ধ নগর পরিবহন, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২২
খুলনায় ৪ বছর বন্ধ নগর পরিবহন, ভোগান্তিতে যাত্রীরা ফাইল ছবি

খুলনা: দেশ স্বাধীনের পর ৬০টি বাস নিয়ে খুলনা শহরে ‘নগর পরিবহন’ সেবা চালু হয়। ২০১৭ সালে ৫৫টি বাসই চলাচলের যোগ্যতা হারায়।

এর পরের বছরই শহরে গণপরিবহন সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে শহরের নগর পরিবহন সেবা বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। একই বছরে অনুষ্ঠিত হয় খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনী ইশতেহারে ‘নগর পরিবহন’ পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পান। তবে চার বছর ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

২০১৯ সালে খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির উদ্যোগে ৪টি গণপরিবহন চালু হয়। কিন্তু ইজিবাইক, মাহেন্দ্রা ও সিএনজির সাথে সম্পৃক্ত থাকা প্রভাবশালীদের কাছে হার মেনে করোনার আগেই সেগুলো ফের বন্ধ হয়ে যায়।
গণপরিবহন সংকট নিরসনে ২০১৬ সালের ১১ জুন পাঁচটি দোতলা বাস (ডাবল ডেকার) চালু করলেও অল্পদিনে বন্ধ হয়ে যায় রাষ্ট্রীয় পরিবহন ‘বিআরটিসি’র এ সার্ভিসটি।

জানা যায়, নগর পরিবহন মালিকদের বিরোধীতার কারণে টিকে থাকতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত এ পরিবহন। নগর পরিবহন সংকটকে কাজে লাগিয়ে ইজিবাইক, মাহেন্দ্র ও সিএনজি অটোরিকশায় যথেচ্ছা ভাড়া আদায়, বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনা, চালকদের অসদাচরণ, যানজটসহ নানা রকমের অত্যাচারে নাকাল নগরবাসী। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে নগরপরিবহন সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

পরিবহন সংকটের কারণে নিজেদের দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফুন্নাহার পলাশী বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিদিন চাকরির সুবাদে ডাকবাংলো থেকে ফুলতলা যাই। প্রতিদিন হাতের উপর প্রাণ নিয়ে বাসা হতে বের হই। বেপরোয়া চালায় মাহেন্দ্র, ইজিবাইক। তার উপরে হাইওয়ের পরিবহনগুলো আরও বেপরোয়া চালায়।

তিনি আরও বলেন, বাসা থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বের হলেও যাত্রীকে ডাকবাংলা টু ফুলতলায় বসে থাকতে হয়। কখন মাহেন্দ্রতে সব যাত্রী হবে তবেই মাহেন্দ্র ছাড়বে। এতে করে অনেক সময় নষ্ট হয়, একই চিত্র রূপসা-ফুলতলায়। পথের মধ্যে যখন যাত্রীরা তার নির্দিষ্ট স্থানে নেমে যায় তখন মাহেন্দ্র নতুন যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে, তাতে করে আরও অনেক সময় নষ্ট হয়। বেপরোয়া চালক একজন যাত্রী তোলার জন্য অন্য একটি মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন যানকে ওভারটেক করে সামনে যায় তখন মনে হয় এই বুঝি অঘটনটা ঘটে গেলো। তাদের বেপরোয়া চালানোতে নাভিশ্বাস উঠে যায় ভয়ে। চলতি পথে মেয়েদেরই অনেক বাজে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রতিবাদ করতে গেলেই উল্টো কথা শুনতে হয় অনেকেরই। মাহেন্দ্রগুলোর যে বিকট শব্দ এতে করে যারা রেগুলার যাত্রী এদের শ্রবণশক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে।

পলাশী বলেন, মাহেন্দ্রের ভাড়া লোকাল গাড়ির তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশী, যেখানে দ্রব্যমূল্য দিন দিন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সেখানে এরকম প্রতিদিনের যাত্রীদের জন্যে এত ভাড়া সত্যিই কষ্টদায়ক, তাই সরকার প্রধানের কাছে দাবি ছাত্রছাত্রী ও জনসাধারণের কথা চিন্তা করে খুলনাতে যেন অবিলম্বে গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়।

রূপসার নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী খলিদ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় পাবলিক বাস সার্ভিস না থাকাতে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ। একে তো দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন অবস্থা তার উপরে যাতায়াতে নেই কোনো পাবলিক বাস সার্ভিস। খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়ি গেট, সোনাডাঙ্গা, মুজগুন্নি, গল্লামারি, নিরালাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খুলনা শহরে সামান্য বেতনে যারা চাকরি বা একেবারেই ক্ষুদ্র ব্যবসা বাণিজ্য করে তাদের বেতনের সিংহভাগই চলে যায় যাতায়াত খরচে। এই পাবলিক বাস সার্ভিস না থাকার কারণে খুলনা এখন অটোরিক্সার মিছিলে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। পরিচ্ছন্ন খুলনা এখন তীব্র ভয়ঙ্কর যানজটের নগরিতেপরিণত হয়েছে।

খুলনা জেলা ‘আগুয়ান-৭১’ সভাপতি আবিদ শান্ত বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে মেয়রের ৩১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে অন্তম ছিল যাতায়াত ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন। কিন্তু বিগত ৪ বছরে এই খাতে  উন্নয়ন না বাড়লেও স্রেফ ভোগান্তি বেড়েছে। একবছরের বেশি সময় হয়েছে আগুয়ান-৭১ খুলনা শহরে নগর পরিবহন হিসেবে বিআরটিসি বাস চালু করার জন্য মেয়র বরবর স্মারকলিপি দেয়। এখনও পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখতে না পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। নগর-পরিবহন না থাকায় শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে ইজিবাইক/ মাহেদ্র/অটোতে করে বড় অঙ্কের ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হয় এবং একপ্রকার চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।

নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, বছরের পর বছর নগর পরিবহন চালু না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবীরা। ইজিবাইক, মাহেন্দ্র ও সিএনজি অটোরিকশায় যথেচ্ছা ভাড়া আদায়, বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনা, চালকদের অসদাচরণ, যানজটসহ নানা রকমের অত্যাচারে নাকাল নগরবাসী। খুলনায় গণপরিবহন চালুর দাবিতে আমরা একাধিক মানববন্ধন সভা-সমাবেশ করেছি। সম্প্রতি সময়ে একই দাবিতে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছি। ১৭ জুলাই (রোববার) খুলনা সিটি মেয়রেরর কাছে ১৮ জুলাই (সোমবার) খুলনা জেলা প্রশাসেকর কাছে ও ১৯জুলাই (মঙ্গলবার) বিআরটিএর পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এছাড়া একই দাবিতে ২৩ জুলাই (শনিবার) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে নিরাপদ সড়ক চাই।

এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা মহানগর শাখার পক্ষ থেকে অবিলম্বে নগরীতে গণপরিবহনের চালুর জোর দাবি জানান এ নেতা ।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাঁধা নেই। আগে চলতো এখন চলে না কেন জানি না। এটা প্রশাসন জানে। কেউ যদি চালাতে চায় তার নিজ দ্বায়িত্বে চালাবে।  

`আপনার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল' জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গাড়ি সংগ্রহ করতে পারি নি। আমাদের কয়েকটি রাস্তা একনেকে পাশ আছে সেগুলো করতে পারলে আমরা নগরপরিবহন চালু করবো। যেহেতু একনেকে পাশ করা রাস্তাগুলো কেডিএ করেনি। রাস্তা প্রস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমি নতুন কোনো গাড়ি আনতে পারবো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২২
এমআরএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।