ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যাবজ্জীবন সাজা এড়াতে ৩০ বছর আত্মগোপনে ছিলেন শাহজাহান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
যাবজ্জীবন সাজা এড়াতে ৩০ বছর আত্মগোপনে ছিলেন শাহজাহান

নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় বহুল আলোচিত শাহাদত হত্যাকাণ্ডের পর ৩০ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন শাহজাহান আলী ওরফে সোহরাব হোসেন স্বপন (৫৪)। অবশেষে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক এ আসামিকে ধরতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব-৫)।

শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে সকাল ৬টার দিকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

আটক শাহজাহান আলী ওরফে সোহরাব হোসেন স্বপন নলডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম সোনাপাতিল গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে। তার বর্তমান ঠিকানা দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি থানার পুর্ব কাটাবাড়ি গ্রামে। শাহাদত হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে নাম-পরিচয় গোপন ও ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

নিহত শাহাদত হোসেন নলডাঙ্গা উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের মৃত সমজান আলীর ছেলে। স্থানীয় নলডাঙ্গা বাজারে তার মাইক ও ব্যাটারি সার্ভিসিংয়ের দোকান ছিল। পাশাপাশি মাছের ব্যবসা করতেন তিনি। তার মৃত্যুকালে মেয়ে শারমিন সুলতানা সাথীর বয়স ছিল পাঁচ বছর, ছেলে মো. আব্দুল রউফ বাপ্পির বয়স তিন এবং ছোট ছেলে মো. বাবলা হাসানের বয়স ছিল মাত্র সাত মাস।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফিরোজা নামে এক নারীকে বিয়ে করা নিয়ে শাহদত হোসেন ও শাহজাহান আলীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালের ১৭ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি সংলগ্ন বারনই নদীতে গোসল করতে গেলে প্রকাশ্য দিবালোকে শাহজাহান আলীর ছুরিকাঘাতে খুন হন শাহাদত হোসেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আসামি শাহজাহান আলী আত্মগোপনে চলে যান।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে জেলার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর-১২, তারিখ: ১৭ মে ১৯৯২, জিআর-৯৪/৯২ (নাটোর), ধারা- ৩০২ পেনাল কোড। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একমাত্র আসামি শাহজাহানকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৯৯৫ সালের ২৯ মে নাটোর জেলার জেলা সেশন আদালত অভিযুক্ত শাহজাহান আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। একই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
এর পর দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পলাতক ছিলেন শাহজাহান আলী। তবে তাকে ধরতে র‌্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ সকালে সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল এলাকায় কোম্পানি অধিনায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানি উপ-অধিনায়ক, মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে যাবতজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি শাহজাহান আলীকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গ্রেফতার শাহজাহান স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। এর পর ১৯৯২ সালে শাহজাহান পার্শ্ববর্তী গ্রামে জনৈকা ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করেন। ওই বিয়েকে কেন্দ্র করে শাহজাহান এবং নিহত শাহাদতের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

হত্যাকাণ্ডের পরে শাহজাহান আলী দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান। সেখানে ফুলবাড়ী পৌরসভায় সোহরাব হোসেন স্বপন নামে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। এছাড়া তার আদি নিবাস রংপুর বলেও সবাইকে জানাতেন।

প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী এলাকায় বিভিন্ন কাজকর্ম করলেও গত ১০ বছর ধরে গাজীপুরে গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করে আসছিলেন। ফুলবাড়ীতে থাকার সময় তিনি সোহরাব হোসেন স্বপন নামে একটি ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তিনি দিনাজপুর ও ঢাকায় অবস্থান করলেও গোপনে নিজ এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। শেষ পর্যন্ত র‌্যাবের জালে ধরা পড়েন তিনি।

র‌্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানি উপ-অধিনায়ক মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, ২৩ জুলাই, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।