ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গাঁজার প্যাকেট দেখাতেই মুখ থেঁতলে দিলেন স্বামী-শাশুড়ি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
গাঁজার প্যাকেট দেখাতেই মুখ থেঁতলে দিলেন স্বামী-শাশুড়ি

নড়াইল: আশিক খান, নড়াইল সদরের পলইডাঙ্গা গ্রামের এ বাসিন্দা একজন মাদকাসক্ত। বিয়ে করেছেন অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ সদস্যের মেয়েকে।

প্রতিনিয়ত স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য অত্যাচারও করতেন। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে স্বামীর গাঁজার প্যাকেট শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেই দেখাতেই হিংস্রতার শিকার হন তিনি। ভুক্তভোগী বর্তমানে ভর্তি আছেন নড়াইল সদর হাসপাতালে।

ভুক্তভোগীর নাম সুমাইয়া ইসলাম (২০)। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপক অত্যাচারের শিকার হন তিনি। তার স্বামী আশিক, শাশুড়ি শেফালী বেগম ও ননদ সামিরা তাকে মারধর করেন। থেঁতলে দেন মুখ। আঘাত পেয়েছেন মাথা ও পায়ে। ঘটনার পর থেকে স্বামী আশিক খান পলাতক রয়েছেন।

ভুক্তভোগীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম। বসবাস করেন লোহাগড়া উপজেলার শামুকখোলা গ্রামে। মেয়ের অত্যাচারের ঘটনায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ করেননি তিনি।

জানা গেছে, ২০২১ সালে পলইডাঙ্গা গ্রামের আশিক খানের সঙ্গে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর মোটরসাইকেল কিনে দিতে সুমাইয়াকে বলেন তিনি। কিন্তু সেটি কেন দেওয়ার মতো টাকা হাতে নেই বলে স্বামীকে জানান সুমাইয়া। নাছোড়বান্দা আশিক তাকে তার বাবা পেনশনের টাকায় মোটরসাইকেল কিনে দিতে বলেন।

বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। এভাবে কয়দিন চলার পর সুমাইয়া জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত। বিষয়টি নিজের পরিবারের কাছে জানান তিনি। এ কথা জানতে পেরে সুমাইয়াকে নির্যাতন শুরু করে আশিক ও তার পরিবার। নানা অজুহাতে তাকে নির্যাতন করা হতো বলে জানা গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আশিকের এক পুটলি গাঁজা খুঁজে পান সুমাইয়া। পরে তিনি এটি তার শাশুড়ি ও ননদকে দেখান। এ সময় তারা তাকে মারধর করেন। রাতে আশিক বাড়ি এসে বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রীকে আরেকদফা মারধর করেন। সুমাইয়ার শাশুড়ি শেফালী বেগম ও ননদ সামিরাও এসময় তাকে আবার মারধর করেন। রড় দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। এক পর্যায়ে সুমাইয়ার মুখ থেঁতলে দেন আশিক।

এ খবর জানতে পেরে সুমাইয়ার ভাইয়েরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মারধরের কারণে সুমাইয়ার মুখের কয়েকটি দাঁত নড়ে গেছে। ঠোটে অন্তত ১০টি সেলাই লেগেছে। মাথা ও পায়ে গভীর আঘাত লেগেছে বলেও তারা জানান। পরে এ তথ্যগুলো গণমাধ্যমকে জানান সুমাইয়ার পরিবার।

সুমাইয়ার ভাই রমজান বাংলানিউজের কাছে বলেন, এক বছর হয় আমরা বোনকে বিয়ে দিয়েছি। এর মধ্যে ৯ মাসই তাকে নানা অজুহাতে মারধর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কয়েকদফা গ্রাম্য সালিসও হয়েছে। কিন্তু, তারপরও তারা থামছিল না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আমার বোনকে মেরে মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।

নড়াইল সড়র হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. পার্থ সারথি রায় বাংলানিউজকে বলেন, ভুক্তভোগীর মুখে ও ঠোট মারাত্মক জখম হয়েছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। ইন্টারনাল হেমারেজ আছে কিনা সেটি জানতে সিটিস্ক্যানসহ অন্যান্য পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে পেলে অবস্থার বিবরণ দেওয়া যাবে।

স্থানীয় একটি চায়না ফার্মে দোভাষীর কাজ করেন আশিক। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কিনা জানতে চাইলে সুমাইয়ার ভাই জানান, পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।