সিলেট: সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। অর্থ কেলেঙ্কারির দ্বন্দ্বের জেরে বহিষ্কার এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার করছে।
এক ছাদের নিচে থাকা সমিতির দায়িত্বশীলদের মধ্যে এখন যোজন-যোজন দূরত্ব। পক্ষে-বিপক্ষে তারা বিষোদগার করছেন। অভ্যন্তরে থাকা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে তুলে ধরছেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা ট্রাক পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কার্যালয়ে জরুরি সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়জুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ মো. মোহিদ মিয়াকে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. কয়ছর আলী জালালীকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পক্ষান্তরে বহিষ্কৃতরা শাহ নুরুর রহমান শানুরকে সভাপতি ও ‘বহিষ্কৃত’ সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল ইসলামকে স্বপদে রেখে করে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেন।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম পক্ষের কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন এবং তাদের দ্বারা বহিষ্কৃত সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুলের বিরুদ্ধে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ, তহবিল আত্মসাৎ ও সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে ধরেন।
সাধারণ সম্পাদক পক্ষের ওই কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক রিমাদ আহমদ রুবেল লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সভাপতির দায়িত্বে থাকা গোলাম হাদী ছয়ফুলকে বিভিন্ন অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের উপস্থিতিতে ১৫ সেপ্টেম্বর বিশেষ সভায় বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়টি রেজলেশন করে ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে জানানোও হয়। তবে তার সামাজিক অবস্থানের কথা বিবেচনা করে গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর সমিতির ৩১ সদস্যের কার্যকরী কমিটি ১১ অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে ছয়ফুল গণমাধ্যমে জানান, সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ মোহিদ মিয়াসহ তিনজনকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের বিষয়টি স্বীকার করেন তারা।
এদিকে গোলাম হাদী ছয়ফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বহিষ্কৃত ফয়জুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সাবেক অবৈধ কমিটির সভাপতি ছিলেন গোলাম হাদী ছয়ফুল। ১০ বছর ওই ব্যানারে থেকেও কিছু করতে পারেননি। আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন দেখে, আমাদের দ্বারস্থ হন। ২০১৯ সালে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হলে সমিতির অফিস তিনি ড্রইং রুমে নিয়ে যান। কমিটির প্রভাব খাটিয়ে নিটল মটর থেকে অন্তত ২০টি গাড়ির মালিক হয়েছেন হাদি। তার কাছে নিটল মটরস কোটি টাকা পায়।
তিনি বলেন, গাড়ির কিস্তি রেয়াতি করে দিতে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি। মানি রিসিট না দিয়ে মালিকদের কাছ থেকে নিটল মটরসের টাকা আদায় করে তিনি এক লাখ বেশি করে নিয়েছেন। প্রত্যায়নপত্র বাবদপ্রাপ্ত ১০ হাজার টাকা করে শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়ে সেটিও আত্মসাৎ করেছেন। তিনি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার কথা বলে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকারসহ কোয়ারি মালিকদের কাছ থেকেও অন্তত ২২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর সাংগঠনিক সম্পাদককে পেইড এমপ্লয়ি বানিয়ে সব কাজ করান। এখন তিনি দলছুটের মতো কার্যকরী কমিটিতে ১৩ জন নিয়ে আছেন, আর আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সংগঠনের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ মিলে সংগঠনের ২০২১-২২ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ে ৩ লাখ ৭২ হাজার টাকার হিসাব দিতে পারেননি। ওই টাকা তারা ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি। মিটিংয়ে বলেছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি টাকা জমা দেবেন। টাকা পরিশোধ না করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা আমাকে কীভাবে বহিষ্কার করবে? তাদের অপরাধ লুকাতে এখন পাল্টা অভিযোগ তুলে সংগঠনের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। বিরোধের বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক সংগঠনের নেতারা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা আইনি পদক্ষেপে যাইনি। তবে আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট আসার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বরেন, ২০০৩ সাল থেকে অন্তত ৩৫টি গাড়ির মালিক ছিলাম। তখন ট্রাক মালিক গ্রুপের দায়িত্বে ছিলাম না। ২০১৯ সালে এই কমিটির সভাপতি হয়েছি। এখন আটটি গাড়ি রয়েছে, বাকিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। ট্রাক মালিক সমিতি দিয়ে আমি গাড়ির মালিক হইনি। তাছাড়া পাথর কোয়ারি থেকে টাকা নিয়েছি কিনা, তা কোয়ারি ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বললে জেনে নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল আমিন বলেন, ট্রাক মালিক গ্রুপ ও সমিতি আলাদা ছিল ২০১৯ সালে একত্রিত হয়। মূলত; সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল আরটিসির সদস্য হওয়া নিয়ে একটি পক্ষ বিরোধ লাগিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া পাথর কোয়ারি থেকে উত্তোলিত টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলন, সমাবেশের স্বার্থে ওই টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তাই সবাই পুরোপুরি টাকা দেয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
এনইউ/এএটি