বগুড়া: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীছাউনিতে পরে থাকা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের (৮৮) দায়িত্ব নিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিফা নুসরাত।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার কুন্দারহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে আব্দুর রশিদকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিজরুলে ভর্তি করিয়ে দেন ইউএনও।
সব হারিয়ে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৮ বছরের এই বৃদ্ধ খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীছাউনির মেঝেতে।
জানা যায়, নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের ভাটগ্রামের আব্দুর রশিদ সত্তরের দশকে ডিগ্রি ও বিএড সম্পন্ন করে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার সাতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর নিজ উপজেলার বিজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ে ও কুন্দারহাট ইনছান আলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। এছাড়া তিনি এরশাদ সরকারের সময় জাতীয় পার্টির নন্দীগ্রাম উপজেলার সভাপতি হন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে নির্বাচনও করেন তিনি।
সে সময় তাঁর সুখের সংসারে ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছিল জমিজমা, অর্থ-সম্পদ সবকিছুই ৷ ছেলে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মেয়েকে বিয়ে দেন। কিছুদিন পর স্ত্রীও মারা যান। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে আব্দুর রশিদ বেশির ভাগ জমিজমা বিক্রি করে দেন। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন বগুড়া শহরে। যে জমিজমা অবশিষ্ট ছিল তা দ্বিতীয় স্ত্রী, মেয়ে ও শাশুড়ি লিখে নেন। দুই বছর আগে বাড়ির জায়গাসহ সেই জমি তাঁরা বিক্রি করে দেন। এরপর তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন দ্বিতীয় স্ত্রী। এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঠিকভাবে কথাও বলতে পারেন না তিনি।
এদিকে আব্দুর রশিদ মাস্টারকে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন ও আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ইকবাল মাহমুদ শিক্ষক আব্দুর রশিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। ওই শিক্ষকের ফুসফুসে পানি জমেছে। এছাড়া তাঁর কোমরের হাড় ভাঙা, মানসিক সমস্যা, পানিশূন্যতা ও চর্মরোগ আছে। এসব কারণে তাঁর বেশকিছু পরীক্ষা করানো দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিফা নুসরাত বলেন, বিষয়টি জানার পর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তার জন্য জামা কাপড় কিনে দেওয়া হয়েছে। তার বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র, আওয়ামী লীগের সভাপতি, সমাজ সেবা কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। তার সমস্যার স্হায়ী সমাধানের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এটি নিশ্চিত করতে চায় যেকোনো মানুষই গৃহহীন থাকবে না এবং তাঁদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তাঁর চিকিৎসা, আবাসনসহ মানবিক সব বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
এএটি