সিলেট: আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের নানা ভোগান্তির দিক তুলে ধরা হয়।
এসময় আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে বলেন, পাটপোর্ট অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানে দিনে অন্তত ১৬ লাখ টাকার ঘুষ দুর্নীতি হয়।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সিলেট বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে সংশ্লিষ্ট দফতরের সম্মেলন কক্ষে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘব এবং সেবা সহজীকরণে অংশীজনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় এমন অভিযোগ করা হয়।
সভায় উঠে আসে সিলেটে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা-হয়রানির বিভিন্ন বিষয়। এ সময় অংশীজনদের অন্তত ২৭ জন বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে সিলেট পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে অনিয়ম-ভোগান্তির নানা দিক। এরমধ্যে রয়েছে- কাগজপত্রে ইমেইলে দালালদের মার্কা ছাড়া আবেদন গ্রহণে অনীহা, আবেদন শতভাগ সঠিক থাকলেও টাকা না দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর ইচ্ছাকৃত ভোগান্তি সৃষ্টি করা, রোহিঙ্গা পরীক্ষার নামে হয়রানি, নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট ডেলিভারি না দেওয়া, সার্ভার ডাউন-জাতীয় সংকট এবং পাসপোর্ট কার্যালয়ে স্থান ও জনবল সংকট। এর বাইরে পাসপোর্ট পেতে যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়, সেখানেও টাকা ছাড়া সেবা মেলে না সেবা।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নাম হচ্ছে। সম্প্রতি তার পরিচিতি এক ছাত্রলীগ নেতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে পাসপোর্ট করতে হয়। সে নগদ ২০ হাজার টাকা ‘উৎকোচ’ দিয়ে পাসপোর্ট পেয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন অন্তত ১৬ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। দিনে অন্তত প্রায় ৮০০ মানুষ সেবা নেন। একজন গড়ে দুই হাজার টাকা করে দিলে ১৬ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। এখানে সমস্যার অন্ত নেই। তাই ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ’
তাছাড়া মতবিনিময় সভাকে ‘আইওয়াশ’যাতে না হয়, সেজন্য উপস্থিত সবার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংজের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের ভোগান্তির কথা শোনে বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেন। ভোগান্তি লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন তিনি।
অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। সমস্যা জানায় এখন সমাধানে সুবিধা হবে। সিস্টেমের ফাঁকফোকড়গুলো জেনে ভুক্তভোগীদের সমস্যা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘খোলা মনে আলাপ-আলোচনা করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। ’
অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘পাসপোর্টগুলো ঢাকা থেকে প্রস্তুত হয়ে আসে। সার্ভারজনিত সমস্যার সমাধানও তার হাতে নেই। যে কারণে পাসপোর্টের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে কিছু করার থাকে না। তবে পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে দালালদের তৎপরতা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ’
সভায় সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
এনইউ/এএটি