সিরাজগঞ্জ: বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়লেও বিরাট আকৃতির একটি বস্তার ভার বয়ে চলেছেন বৃদ্ধ আবুল হোসেন। এ ভার বহন না করলে ঘরে থাকা স্ত্রী ও নিজের খাবার জুটবে না।
সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গয়লা মহল্লার বাসিন্দা আবুল হোসেনের বয়স একশো বছর পার হলেও থামেনি তার জীবনযুদ্ধ। বয়সের কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষীণ হয়ে এসেছে, চোখও দেখেন ঝাপসা। কিন্তু হাত-পাগুলো এখনও সচল। তবে কোমরটা হেলে পড়ায় তাকে কুঁজো হয়ে হাঁটতে হয়।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে শহরের গোশালা মহল্লায় কাঁধে একটি বস্তা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আবুল হোসেন। মাঝে মাঝে থেমে কুড়াচ্ছিলেন টুকরো কাগজ।
বাংলানিউজের এ প্রতিনিধি তাঁকে থামিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং ফোকলা দাঁতে মিষ্টি হেসে বলেন, আমি কানে কম শুনি। তাঁর বাকশক্তি থাকলেও সেটা খুবই অস্পষ্ট।
অস্ফূট স্বরে থেমে থেমে আবুল হোসেন বলছিলেন তার জীবনের গল্প। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের মৃত কেতাব আলীর ছেলে আবুল হোসেন।
জন্মের পরই বাবার মৃত্যু হওয়ায় তার মুখ দেখা হয়নি আবুল হোসেনের। বাবা কেতাব আলীর নিজস্ব বাড়ি ও ফসলি জমিও ছিল। যমুনার ভাঙনে বাড়ি-জমি সব বিলিন হয়ে গেছে। জন্মস্থান কাওয়াকোলা গ্রামটি এখন সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন।
সহায়-সম্বলহীন আবুল হোসেন স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সরকারি জায়গাতে বাস করতেন। পরে তার স্ত্রী গয়লা পূণর্বাসন প্রকল্পে জমি ও ঘর পান। সেখানেই ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেতেন তারা। তার চার ছেলে আব্দুল কালাম, উজ্জল হোসেন, সুকচাঁন ও আসলাম বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। তারা সবাই দিনমজুর।
আবুল হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসারে ছিলেন। এ অবস্থায় ১৫ বছর আগে স্ত্রী মারা গেলে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। সন্তানরা নিজ নিজ সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তাই বাধ্য হয়ে তিনি মালেকা খাতুন নামে মধ্যবয়সী স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীকে বিয়ে করেন।
এর পর থেকে ১০৫ বছর বয়সেও দ্বিতীয় সঙ্গীকে নিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন আবুল হোসেন। শহরের অলি-গলি মহল্লা ঘুরে ঘুরে দিনভর কাগজ কুড়ান তিনি। ওইসব কাগজ বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে চলে তার জীবন সংসার।
আবুল হোসেন বলেন, প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে ছেলেরা তাদের পরিবার নিয়ে থাকে। তার পাশেই একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে আমি স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। ছেলেরা আমার খোঁজ-খবর নেয় না। যতদিন হাত-পা সচল আছে খেটে খাই। কারও কাছে হাত পেতে নেই না।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
এফআর