ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘এনক্রিপ্টেড অ্যাপস’ ব্যবহারে চলছে মাদকের কারবার!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
‘এনক্রিপ্টেড অ্যাপস’ ব্যবহারে চলছে মাদকের কারবার!

ঢাকা: দেশে এখন ডিজিটাল। ডিজিটাল দেশে বেড়েছে ডিজিটাল অপরাধ।

নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে। থেমে নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। অপরাধীদের গ্রেফতার ও মামলার তদন্ত কার্যক্রমে ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও। এতে অপরাধীরা ধরাও পড়ছে সহজে।

কিন্তু কিছু কিছু সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পিছিয়ে পড়ছে অপরাধীদের চেয়ে। যার কারণ সংরক্ষিত প্রযুক্তির ব্যবহার। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মাদক কারবারি চলে জাঁকিয়ে। নেশার মরণ ছোবলে সমাজের তরুণরা ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। মাদক কারবারি ও সেবীদের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। ইয়াবা ট্যাবলেটের পর দেশে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস মাদকের বাজার তৈরিতে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। পার্শ্ববর্তী দেশে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার পাচারের রুটেই আসছে এ ভয়াবহ মাদক।

মাদক কারবারিরা তাদের কারবার সচল রাখতে একের পর এক অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছে। টেকনাফ থেকে ঢাকায় মাদকের চালান আনতে বা ঢাকা থেকে চালান অন্যত্র পাঠাতে এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহার করছে তারা। এতে চক্রের সদস্যরা সব তথ্য নিজেদের মধ্যে গোপন রেখে থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এক অভিযানে এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহারকারী মাদক কারবারি একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। অ্যাপসটি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা টেনকাফ থেকে ঢাকা ও গাজীপুর জেলায় মাদকের চালান নিয়ে আসত। পরে সেখান থেকেই স্থানীয় কারবারিদের কাছে সরবরাহ করত তারা। মাদক বিক্রির অর্থ কারবারিরা আদান প্রদান করতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, গ্রেফতার আসামিরা সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির আড়ালে মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিল। চালান সরবরাহ ও সংগ্রহের জন্য চক্রের সদস্যরা এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহার করত। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র স্মরণী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তর অঞ্চলের একটি টিম। অভিযানে তাদের কাছে ৯ হাজার ৬৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৩ গ্রাম আইস মাদক ও তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এলিট ফোর্স নামের একটি কোম্পানির দুজন নিরাপত্তারক্ষী মো. ইসমাইল (৩২), রবিউল হাসান মামুন (২০) ও কাপড় ব্যবসায়ী মো. জাকারিয়া মাসুদ বাপ্পি (২৬) নিজেদের চাকরি ও ব্যবসার আড়ালে মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিল। গ্রেফতার ইসমাইল ও তার সহকর্মী রবিউলের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলায় হওয়ার সেখান থেকে খুব সহজেই তারা ইয়াবা ও আইস মাদক সংগ্রহ করতেন। তাদের এই চক্রের আরও যুক্ত হন সাতক্ষীরা জেলার কাপড় ব্যবসায়ী জাকারিয়া। তারা তিনজন কক্সবাজারের টেকনাফ, ঢাকার উত্তরা ও গাজীপুর জেলা কেন্দ্রিক একটি মাদক কারবারি চক্র গড়ে তোলেন। তারা টেকনাফ থেকে মাদক সংগ্রহ করে সেগুলো ঢাকা ও গাজীপুরে মাদক কারবারিদের কাছে পাইকারি দামে বিক্রি ও সরবরাহ করতো।

নিজেদের তথ্য ও যোগাযোগের বিষয়টি গোপন রাখতে তারা এনক্রিপ্টেড বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করতো। এছাড়াও খুব বেশি দিন এক সিমকার্ড ব্যবহার করতো না। এভাবেই তারা সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির পাশাপাশি মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিল।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই চক্রটি সবাই গোপনীয়তার স্বার্থে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহার করতো। তাদের নির্দিষ্ট ফোন নম্বর নেই। কিছুদিন পর পর তারা ফোন নম্বর পরিবর্তন করে ফেলত। গ্রেফতার আসামিদের ডিভাইসে থাকা এনক্রিপ্টেড অ্যাপসগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান চলছে। ’

দেশে প্রতিনিয়ত মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের অধিকাংশ মানুষ মাদকের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। একদিকে দেশে মাদকের চাহিদা বাড়ছে। সেই সঙ্গে মাদকের সরবরাহও বাড়ছে। মাদক বাংলাদেশের মেধা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বড় বাধা বলে মত প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বেসরকারি একটি হিসাব অনুসারে, বর্তমানে দেশের মাদকাসক্ত রয়েছে ৭৫ লাখেরও বেশি। এসব মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ যুবক-যুবতী। বেকার রয়েছে ৪৩ শতাংশ, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৬০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ অশিক্ষিত, ৪৮ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ৫৭ শতাংশ যৌন অপরাধী। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ ধূমপায়ী।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সমাজের ১৫-৩০ বছর বয়সীদের মাদকাসক্তে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অধিদপ্তরের ২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৬-৪০ বছর বয়সীদের প্রায় ৮৪ দশমিক ২৭ শতাংশ মাদকাসক্ত। এই বয়স সীমার মধ্যে ২১-২৫ বছর বয়সী যুবকরা রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। ২৬-৩০ এবং ১৬-২০ বছর বয়সীরা মধ্য ঝুঁকিতে এবং ৩১-৩৫ বছর বয়সীরা রয়েছে স্বল্প ঝুঁকিতে। এদিকে, বন্ধুদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে সমাজের ৫৯ দশমিক ২৭ শতাংশ মাদকাসক্ত হচ্ছেন। অপর দিকে মাত্র ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ কৌতূহল বসত মাদক সেবনে ঝুঁকছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।