ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে ২৭৪১ মণ্ডপে দুর্গোৎসব

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২২
সিলেটে ২৭৪১ মণ্ডপে দুর্গোৎসব

সিলেট: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে সিলেটজুড়ে এখন সাজ সাজ রব।

দেবীর আগমনে মণ্ডপে মণ্ডপে ছড়াবে আনন্দের ঢেউ। সার্বজনীন দুর্গোৎসবে রং ছড়াবে সবখানে।  

শাস্ত্রমতে, শনিবার (১ অক্টোবর) বিল্লষষ্ঠী তথা বেলবৃক্ষের নিচে পূজার মধ্য দিয়ে দেবীকে আহ্বান করা হবে। তাতে বিল্লবৃক্ষে অধিষ্ঠিত হবেন দেবী। রোববার (২ অক্টোবর) মহাসপ্তমীতে বাদ্য বাজিয়ে মূল মন্দিরে প্রতিমা স্থাপনের পর শাস্ত্র মেনে ত্রিনয়নী দেবীর চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এরপর দেহশুদ্ধি করে আসন পূজা করে ঘট স্থাপনে মূল পূজার কার্যক্রম শুরু করা হবে। দেবীর আরাধনায় মুখরিত হবে মণ্ডপগুলো।

এমনটি জানিয়ে কাব্যতীর্থ নগরের গোপালটিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের পুরোহিত রজত কান্তি চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, দেবী অনেক রূপে আসেন। বৈষ্ণবী রূপে আসা শান্তির প্রতীক। আসুরিক শক্তিতে আসেন অসুর দমনে। ঘটকে চড়ে আসা-যাওয়া মানে ছত্রভঙ্গ তথা হানাহানি-মারামরির ইঙ্গিত বহন করে। পালকিকে প্রস্থান মানে রোগ জীবাণু বেশি হওয়া।  

তবে এবার দেবী গজে চড়ে আসবেন। আর কৈলাশে স্বামীগৃহে যাবেন নৌকায় চড়ে। শাস্ত্রীয় মতে, গজে চড়ে আসা মানে জলদি তথা ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন, টনের্ডো ও বন্যার ইঙ্গিত করা হয়। আর নৌকায় চড়ে যাওয়া শাস্ত্রীয় মানে শস্য বৃদ্ধি তথা ফসল ভালো হবে। এছাড়া বিসর্জনের পর প্রত্যেক মণ্ডপে শান্তির জন্য আরাধনা করবেন তারা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা বলেন, এবার সিলেট বিভাগজুড়ে ২ হাজার ৭৪১টি মণ্ডপে হবে দুর্গোৎসব। বিভাগে গত বছর থেকে এবার পূজা মণ্ডপ বেড়েছে ১৫৭টি। গত বছর বিভাগে পূজামণ্ডপ ছিল ২ হাজার ৫৮৪টি। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে এবার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে ৫০০ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে মণ্ডপ প্রতি নগদ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, পূজা মণ্ডপগুলো তদারকিতে বিভাগ, জেলা-উপজেলা ও সিসিক এলাকায় ১০ সদস্যের করে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে মণ্ডপগুলোতে ডিজে পার্টি, হিন্দি গান বাজানো এবং মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি এবার বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকছে।  

এদিকে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদযাপনে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এর বাইরেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অতিরিক্ত তদারকি ব্যবস্থা করেছে। সিলেট সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালু করা হয়েছে হটলাইন।  

সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, জেলার ১১টি থানা এলাকায় ৪৫৭টি মণ্ডপে পোশাকে, সাদা পোশাকে এক হাজার পুলিশ নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে প্রস্তুত থাকছে কুইক রেসপন্স টিম। সেইসঙ্গে অতিগুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মণ্ডপ বিবেচনায় নিরাপত্তা ছক করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে মনিটরিং টিম কাজ করবে।  

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বাংলানিউজকে বলেন, মহানগরে ১৫৫টি মণ্ডপের অতিগুরুত্বপূর্ণ ৩২টি, গুরুত্বপূর্ণ ৩৭টি, সাধারণ ৬৬ ও পারিবারিক ২০টি মণ্ডপ চিহ্নিত করে পোশাকে-সাদা পোশাকে সাড়ে ৩ শতাধিক ফোর্স মোতায়েন থাকবে। তন্মধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ২টি, মোবাইল টিম ৯টি, থাকবে বোম্ব ডিসপেজাল টিম। এছাড়া ফেসবুকে গুজব ছড়ানো রোধে বিশেষ টিম কাজ করবে। তাছাড়া সার্বিক তদারকিতে কমিশনার থেকে শুরু করে সব কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৬টি। সিলেট মহানগর ও জেলায় ৬২১টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।  

মহানগরীতে ১৫৫টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ১৩৬ ও পারিবারিক ১৯টি। সিলেট জেলায় ৪৬৬টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ৪২৬টি ও পারিবারিক ৩১টি। সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৬০টি, বালাগঞ্জে ৩০টি, কানাইঘাটে ৩৫টি, জৈন্তাপুরে ২২টি, বিশ্বনাথে ২৬টি, গোয়াইনঘাটে ৩৬টি, জকিগঞ্জে ১০৭টি, বিয়ানীবাজারে ৫২টি, কোম্পানীগঞ্জে ২৬টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩৮টি ও ওসমানীনগরে ৩৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।  

মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৬টি মণ্ডপের মধ্যে পৌরসভা ও সদরে ১০৯টি, শ্রীমঙ্গলে ১৬৭টি, বড়লেখায় ১৫১টি, জুড়িতে ৭২টি, রাজনগরে ১২৯টি, কমলগঞ্জে ১৬০টি ও কুলাউড়ায় ২১৮টিতে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  

সুনামগঞ্জে এবার ৪২৪টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে পৌর এলাকায় ২৬টি, সদরে ২৩টি, ছাতকে ৩৪টি, জগন্নাথপুর পৌর এলাকায় ৬টি এবং উপজেও ৩৪টি, দিরাই পৌর এলাকায় ৭টি ও উপজেলায় ৬০টি, শান্তিগঞ্জে ২২টি, জামালগঞ্জে ৪৯টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩০টি, শাল্লায় ৩৩টি, তাহিরপুরে ৩০টি, দোয়ারাবাজারে ১৯টি, ধর্মপাশায় ১৮টি ও মধ্যনগরে ৩৩টি।  

হবিগঞ্জ জেলায় এবার ৬৯২টি পূজামণ্ডপের মধ্যে পৌরসভায় ৩৭টি, সদরে ৪২টি, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় ৯টি, উপজেলায় ১২টি, লাখাইয়ে ৬৭টি, আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায় ৮টি, উপজেলায় ৩২টি, বানিয়াচংয়ে ১২৬টি, চুনারুঘাট পৌরসভায় ১০টি, উপজেলায় ৭৯টি, মাধবপুর পৌরসভায় ১৩টি, উপজেলায় ১১১টি, বাহুবলে ৫২টি, নবীগঞ্জ পৌরসভায় ৭টি ও উপজেলায় ৮৭টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২২ 
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।