ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সুফি বুড়ির’ সুখি জীবন!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২২
‘সুফি বুড়ির’ সুখি জীবন!

সিংড়াবুনিয়া গ্রাম থেকে: প্রান্তিক জনপদ। চারদিক নীরব নিস্তব্ধতা।

যে বয়সে সঙ্গী থাকার কথা, ঠিক এমন বয়সে তার একাকিত্ব; যে বয়সে বিশ্রামে থাকার কথা সে বয়সে এসে শুধু একাকিত্বই নয়; পেটের দায়ে নিজের উপার্জনেই দিন পার করতে হচ্ছে। তার শরীরের দিকে তাকালেই বয়সের ছাপ ধরা পড়ে। হাড্ডিছাড়া শরীরে কিছুই দেখা যায় না।

বলছি সুফিয়া বেগমের কথা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন ৮৩-তে। স্বামী আব্দুর হাকিম মিয়া মারা গেছেন ২০ বছর আগে। তাদের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। একমাত্র ছেলে তাও প্রতিবন্ধী। একটা সময় সুফিয়ার সংসার ভালোভাবেই চলছিল। স্বামীর উপার্জন আর সন্তানদের মুখের হাসি নিয়েই দিন পার করতেন। এখন আর সেই সময় নেই, নেই সেই আনন্দ আর সুখি জীবন। তারপরও যেন এটাই সুফিয়ার সুখি জীবন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেঠোপথের চারদিকে নিস্তব্ধ নীরবতা। স্বামীর রেখে যাওয়া তিন শতক জমিতে একটি ঝুপড়ি বানিয়ে বসবাস করে আসছেন ওই বৃদ্ধা। ঘরের একপাশে রান্না করার চুলা, আরেক পাশে শোয়ার বিছানা। দেখলে মনে হবে এখানে মানুষ থাকার জায়গা নয়। স্বামীর রেখে যাওয়া ওই তিন শতক জমির মধ্যে ত্রাণে পাওয়া একটি ঘরে প্রতিবন্ধী ছেলে নিজের সংসার নিয়ে থাকেন।

জানা যায়, প্রতিবেশিরা সুফিয়াকে ‘সুফি বুড়ি’ বলে ডাকেন। উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি না থাকায় কোনোদিন তিনবেলা না খেয়েও থাকেন। মাঝেমধ্যে প্রতিবেশিরাও খাবার দিয়ে যান। এ বয়সেও কাজ করে পেটের ক্ষুধা মেটাতে হয় এমন প্রশ্ন করা হলে তার মতে এটাই তার সুখি জীবন। কারণ বেঁচে থাকতে হলে তো এ বয়সেও কাজ করে খেতে হবে।

কথা হয় সুফিয়া বেগমের সঙ্গে তিনি বলেন, তিন মেয়ে তাদের নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হলে তারা নিয়ে যায়, আর ছেলে নিজের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপর আমার খবর রাখবে কখন। নিজের পেটের ক্ষুধা মেটাতে নিজেরই কাজ করতে হয়।  

এ বয়সেও কী কাজ করেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আশপাশের বাড়িতে টুকিটাকি কাজ করি, তারা চাল, ডাল দেয় তা নিয়ে আসি। মাঝেমধ্যে প্রতিবেশিরা এমনিতেও চাল দেয়, ভাত দেয়। এ নিয়ে কোনো মতে দিন পার করছি। সরকার থেকে বয়স্ক ভাতা পাই ওটা দিয়ে ওষুধ কিনি। এভাবেই চলে আমার জীবন। এখন ওপারে যাওয়ার অপেক্ষা।

প্রতিবেশি ইসমাইল বলেন, আমাদের বাড়ির মধ্যে এক টুকরো জমিতে থাকেন তিনি। আমরা সব সময় তার দিকে খেয়াল রাখি। মাঝেমধ্যে আমরা তাকে খাবার দিই। তিনি একা থাকার কারণে আমরা সবাই একটু চিন্তিত থাকি।

প্রতিবেশি সাবেক ইউপি সদস্য আবু জাফর নান্না বলেন, সুফিয়া একজন সহজ সরল মানুষ। তিনি খুবই অসহায়। স্বামীর রেখে যাওয়া জমিতে করা ঝুপড়িতে থাকেন। এ বয়সেও তার কাজ করে খেতে হয়। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করছি। গরিব ও অসহায় মানুষের জীবন কতটা দুর্বিষহ তার উদাহরণ সুফিয়া বেগম।

নাচনাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, সুফিয়ার দুর্বিষহ জীবন-যাপনের দিক বিবেচনা করে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে যেকোনো সুযোগ-সুবিধা তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।