কেন্দ্রীয় বিসর্জন ঘাট, ঢাকা থেকে: সন্ধ্যা হতে না হতেই নীল আকাশ আরও উজ্জ্বল হলো রুপালি চাঁদের আলোকছটায়। সে আলো পড়ে বুড়িগঙ্গার জলে, ওঠে ঢেউ।
ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল তার সাঙ্গ হলো বুধবার (৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা সম্পন্নের পর মর্ত্য ছেড়ে নিজ আলয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা।
বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে রাজধানীর ওয়াইজঘাটে ভিড় করেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। এ সময় নানা ধর্ম, শ্রেণি, পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
এর আগে চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। পরবর্তী ৪ দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনায় ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এরপর মনের কলুসতাকে ঝেড়ে ফেলে আগামীর পৃথিবী হবে সম্প্রীতির ও সুন্দর—এই প্রার্থনায় আগামী বছরের অপেক্ষায় দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
প্রতিমা বিসর্জনের পর ওয়াইজঘাটে পূজারী আশা রানী বাংলানিউজকে বলেন, মাকে হাসিমুখে বিদায় দিতে পারলাম, এটাই আনন্দ। আমরা চাই সবাই ভালো থাকুক, সুখে থাকুক। সকলের শান্তিই কামনা করেছি মায়ের কাছে। আমরা তো সব সময় এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করি। এখন আবার সেই অপেক্ষা, মা আবার কবে আসবেন!
প্রতিমা বিসর্জনের পর ধানমন্ডির বাসিন্দা সুরেণ দাশ বলেন, করোনার পর অর্থাৎ দুই বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা দুর্গাপূজা পালন করতে পারলাম। এজন্য অনেক ভালো লাগছে। আর দেবীর কাছে আমাদের প্রার্থনা এই ছিল যে, সকলে সুখে থাক, শান্তিতে থাক। সম্প্রীতির বন্ধন হোক আমাদের সকলের।
শাস্ত্রমতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাশ থেকে সপরিবারে মর্ত্যলোকে এসেছেন গজে (হাতি) চড়ে, আর ফিরেছেন নৌকায়।
বিজয়া দশমীর সকালে অঞ্জলির পর থেকে থেকে নগরীর বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল সিঁদুর আর পান চিনিতে অশ্রু সজল নয়নে বিদায় জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুপুর থেকে ট্রাকে কিংবা ভ্যানে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় নদীর বিভিন্ন স্থানে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও উৎসব দেখতে ভিড় করেন। শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবক সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয় বিসর্জন প্রাঙ্গণ। ঢাকের বাদ্য আর কাঁসার ঘণ্টায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বিসর্জন ঘাট ও আশপাশের এলাকা। পান-সিদুঁর আর মিষ্টিমুখ করিয়ে চারদিনের আনন্দ শেষে অশ্রুজলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিদায় দেন দেবীকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ