নড়াইল থেকে: দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে ভঙ্গুর জেলা ছিল নড়াইল। ঢাকা থেকে বেশি দূরত্বের পথ না হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় অর্থনীতিও ছিল সংকুচিত।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। আমূল পরিবর্তন আনবে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতেও। শিল্প ও যোগাযোগের হাব হয়ে উঠবে অবহেলিত জেলা নড়াইল।
সরেজমিনে উঠে এসেছে এ অঞ্চলের অর্থনীতির নতুন যাত্রার নানা দিক।
নড়াইল অঞ্চলে ঘটবে শিল্প বিপ্লব
নড়াইল ১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বাংলানিউজকে বলেন, এ অনুভূতি বলে শেষ করা যায় না। মধুমতি সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা কী কী প্রভাব পড়বে তা এখন অনেকেই অনুমান করতে পারছেন না। আমূল বদলে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতি। নতুন করে শিল্প বিপ্লব ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তিনি আমাদের জন্য এই সুযোগ করে দিয়েছেন।
নড়াইল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঞ্জুমানারা বাংলানিউজকে বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পর মধুমতি সেতু উদ্বোধন হলো। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জন্য যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। এতে আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। উন্নয়ন ঘটবে মানুষের ভাগ্যের।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, আর্থ-সামাজিক, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই উন্নতি হবে। এলাকার ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সবাই অপেক্ষা করছেন মধুমতি সেতু দিয়ে তাদের জীবনমান পরিবর্তন হবে।
দূরত্ব কমবে ঢাকার
মধুমতি সেতু চালুর ফলে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় যাতায়াত সহজ হবে। ঢাকা যেতে সময় কমবে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।
নড়াইলের দূরত্ব আগে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছিল ২২৫ কিলোমিটার কিন্তু ফেরি পারাপার ও অপ্রশস্ত রাস্তাঘাটের কারণে সময় লাগতো ৬-৭ ঘণ্টা।
এখন ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমে এ পথের দূরত্ব দাঁড়িয়েছে ১৩৯ কিলোমিটার। প্রশস্ত রাস্তাঘাট ও ফেরিবিহীন যাতায়াতে ঢাকা যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা।
খুলনা বিভাগের দশ জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে নড়াইল হাব হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্পের আওতায় এই সেতুই প্রথম উদ্বোধন করা হচ্ছে। এই সেতুটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল আমরা পেয়েছি কিন্তু সেই সুফল পুরোপুরি পেতে এই মধুমতি সেতুর কানেকশন জরুরি ছিল।
চাঙা করবে অর্থনীতির চাকা
নড়াইল জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহির বাংলানিউজকে বলেন, নড়াইল থেকে আগে শুধুমাত্র তিনটি পরিবহন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম যেত। সেতু হওয়ার পর পাঁচটি নতুন পরিবহন এখানে কাউন্টার নিয়েছে। তারা যাত্রা শুরু করলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙা করবে এবং সড়ক যোগাযোগ সহজ করবে।
এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরার দূরত্বও কমে আসবে। এশিয়ান হাইওয়েতে থাকা এই সেতুটি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
মধুমতি সেতু ঘিরে হবে ভাঙ্গা-বেনাপোল এক্সপ্রেসওয়ে
প্রকল্প পরিচালক শ্যামল ভট্টচার্য বলেন, ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সরকার সাবমিট করেছে। সেটা হলে এই সেতুর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে।
এই ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ের আওতায় এর আগেই ১৭টি সেতু কালভার্ট সার্ভিসলেনসহ ৬ লেনের সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।
এ বিষয়ে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক শ্যামল ভট্টচার্য বলেন, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ১৭টি সেতু নেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে মধুমতি সেতুই প্রথম উদ্বোধন করা হলো।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২২
এনবি/এসআইএস