ঢাকা: যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধে অস্ত্র প্রতিযোগিতার পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয়, সেই অর্থ বিশ্বের শিশুদের জন্য ব্যয় করুন। মহামারি করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি অনেকটা ধীরে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার (১০ অক্টোবর) মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতু ও শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে ভার্চ্যুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত উন্নত বাংলাদেশ। আমরা সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। তবে করোনা মহামারির ধাক্কা আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এটা আমাদের উন্নয়নের গতিটা অনেকটা শ্লথ করে দিয়েছে। শুধু আমরা না, বিশ্বব্যাপী মানুষের এ কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। তাই আমার আবেদন থাকবে আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, মানুষের উন্নতি চাই। যুদ্ধে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হয়, সেই অর্থ বিশ্বের শিশুদের জন্য ব্যয় করা হোক। শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, তাদের ভালো জীবনের জন্য ব্যয় করা হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতু দুটি নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। এ পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের একটা বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল, আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করবো। আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি।
সেতু দুটির নামকরণ প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মধুমতি নদীর উপরে যেটা আমি কালনা সেতু হিসেবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম, আমি চিন্তা করলাম যেহেতু এটা মধুমতি নদীর উপরে মধুমতি নামটাও খুব মিষ্টি নাম, কাজেই এ নামেই হোক। আর নারায়ণগঞ্জ আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমাদের সংগঠনের দিক থেকেও নারায়ণগঞ্জ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা চিন্তা করেছি নারায়ণগঞ্জবাসীর সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং তাদের জীবনযাত্রা উন্নত করা এটা একান্তভাবে দরকার। এ কথা মাথায় রেখে আমি শীতলক্ষ্যা নদীর উপর তৃতীয় সেতু নির্মাণ করলাম। শীতলক্ষ্যা সেতু এটা নাসিম ওসমানের নামেই দিয়েছি। কারণ নাসিম ওসমান আমার ভাই কামালের বন্ধু ছিল এবং তার বাবা জোহা সাহেব আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তার দাদা ওসমান সাহেবেরও অবদান ছিল আওয়ামী লীগের জন্য। কাজেই তাদের পরিবারটা সব সময় অবদান রেখেছে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধে। এমনকি নাসিম ওসমানের বাবা জোয়া সাহেব ৭১ সালে যখন আমার মা এবং আমরা সবাই ১৮ নম্বর রোড বর্তমানে ৯ নম্বর রোড ধানমন্ডি বাসায় বন্দী। ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করে, সারেন্ডারের পর আমরা কিন্তু মুক্তি পাইনি তখনও পাকিস্তানিরা আমাদের ঘিরে রেখেছিল। তখন জোহা সাহেব আমাদের দেখতে এসেছিলেন। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা আমাদের ওই বাসায় গুলি করে, তারও গুলি লাগে। কিন্তু তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। তাকে আমি স্মরণ করি। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যখন আমরা দিল্লিতে রিফিউজি তখন তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দিল্লিতে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। ১৪ আগস্ট নাসিম ওসমানের বিয়ে হয়, বিয়েতে কামালও গিয়েছিল। ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটেছে নতুন বউ রেখেই নাসিম ওসমান সেই হত্যার প্রতিবাদ জানাতে চলে গিয়েছিল ভারতে এবং সেখানে সে এ হত্যার প্রতিবাদ করে। সেসব কথা সব সময় আমি স্মরণ করি। যদিও এক সময় সে আমাদের পার্টি করত না সে অন্য পার্টিতে গিয়েছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ ছিল এবং বড় বোন হিসেবে সব সময় আমাকে সম্মান করতো। তার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল এ সেতুটির জন্য বারবার আসতো, যখন পার্লামেন্ট মেম্বার তখনো বারবার আসতো আমার কাছে। বলতো আপা এ সেতুটা করে দেন। কিন্তু যখনই আমরা এ সেতুটা তৈরি করা শুরু করলাম তখনই সে ইবাদত থেকে চলে গেল। কাজেই তার নামে আমি এ সেতুটা উৎসর্গ করেছি। সে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকারী কাজেই তার নামে এ সেতুটা করে দিয়ে তার স্মৃতি ধারণ করে রাখতে চেয়েছি। এ সেতুটি আমরা নির্মাণ করতে পেরেছি এজন্য আমি খুব আনন্দিত। এজন্য সৌদি আরব ও জাপানকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের সহযোগিতায় আমরা বাংলাদেশে এত উন্নতি করতে পেরেছি।
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী সেতু দুটির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২২
এসকে/আরবি