পটুয়াখালী: পটুয়াখালী পাওয়ার গ্রিড থেকে পৌর এলাকার বিদুৎ সঞ্চালন লাইনের কারেন্ট ট্রান্সফরমায় ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এ কারণে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল তিনটা থেকে পটুয়াখালী শহরের ফিডারের ১৩৩ কেভির গ্রিড সাবস্টেশন থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
মাঝে নয় ঘণ্টা পটুয়াখালী শহর বিদুৎবিহীন থাকার পর রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সংযোগ চালু হলেও, সাড়ে বারোটায় আবার চলে যায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিদুৎ আসেনি।
শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বাসা বাড়ি, হাট বাজার, হাসপাতাল ক্লিনিক, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলোর সেবা বন্ধ থাকে। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিকল্প বিদুৎ-এর ব্যবস্থা করা হলেও পটুয়াখালী মেডিকেল হাসপাতাল বিকেল সাড়ে তিনটা থেকেই বিদুৎ আসেনি।
পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড ও নবজাতক বিশেষ সেবা ইউনিটের চিকিৎসাধীন ২শ নবজাতকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী ও অভিভাবকদের জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। চারদিকে নবজাতকের আহাজারি, চিৎকার ও সিজারের রোগীদের অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
বিকেল থেকেই বিদুৎহীন হাসপাতালের কক্ষে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে নবজাতক ও শিশুদের নিয়ে ছুটাছুটি করছেন অভিভাবকরা। গাইনী ওয়ার্ডে বিগত দিনসহ আজকের সিজারে ডেলিভারির ৫৪জন রোগী ও নবজাতকের কষ্ট চরমে। এদিকে কোন কোন ওর্য়াডে নেই পানিও। এ যেন এক চরম দুর্গতি।
শিশু ওয়ার্ডের ৮২জন জন শিশুদের নিয়মিত চিকিৎসা বাঁধা গ্রস্ত হচ্ছে। সাড়ে তিনটার পর অনেক শিশুদের গ্যাস দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। এক এক বেডে দুইজন করে শিশু রোগী থাকায় ওয়ার্ডটি পরিণত হয়েছে গরম অন্ধকার কুটোরিতে।
স্কানোতে ভর্তিকৃত সংকটাপন্ন ৭০জন নবজাতকের নয় ঘণ্টা কেটেছে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায়। ইউনিটের বাহিরে অভিভাবকদের দূর্চিন্তা, হতাশা ও আফসোস দেখার কেউ নাই। সবার একটাই কথা পুরো হাসপাতালে কি একটি জেনারেটর নেই। যার মাধ্যমে ডেলিভারির রোগী, শিশু ও বাচ্চাদের শান্তি দেওয়া যেত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে বিকল্প বিদুৎ এর কোন ব্যবস্থা নেই। পূর্বের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর থাকলেও তা কখনো চলেইনি, তবে এখন সেটি অকেজো বলে দাবী করেছেন কর্তৃপক্ষ।
সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতকের অভিভাবক শাখারিয়া এলাকার সিরাজুল হক বলেন, এটা কেমন সেবা প্রতিষ্ঠান। একটা হাসপাতালে নয় ঘণ্টা বিদুৎ নেই, জেনারেটর তো থাকবে। কর্তৃপক্ষের কোন কথা নেই, তারা যে যার মতো। সিজারের রোগী এখন ছটফট করছে।
গাবুয়া এলাকার আবুল কালাম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, শুধু নামেই এত বড় একটা হাসপাতাল, কাজে কিছু না। নেই সেবার মান, নেই সুযোগ সুবিধা। চিকিৎসা সেবা নাকি উন্নতি হইছে? তাহলে এত বড় হাসপাতালে একটা জেনারেটর কেন নাই। কেন শত শত শিশু নবজাতক ও নারীরা এত কষ্ট পাচ্ছে।
দুমকির রুমা বেগম বলেন, আমি আমার মাকে নিয়ে আসছি। তার আজ অপারেশন হয়েছে, ব্লাড দিচ্ছিলাম, কিন্তু অন্ধকারে কিছু দেখছিলাম না, ব্লাড শেষ হয়ে গিয়ে, আবার ওপরে ব্লাড উঠে গেছে। কি যে কষ্টে আছি বলতে পারবো না। এই কয়টা ঘণ্টা জীবনটা নরক হয়ে গেছে।
পুরো হাসপাতাল চলছে কারো মোবাইল বা বাসা বাড়ির টর্চ লাইটের আলোতে। সকলের একটিই প্রশ্ন, যেকোন দুর্যোগে জেলায় বিদুৎ বন্ধ থাকলে, হাসপাতালের বিদুৎ কি বন্ধ থাকবে?
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ আবদুল মতিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদুৎ না থাকলে হাসপাতাল অন্ধকার তো থাকবেই। আমরা কি করবো? পূর্বের একটা জেনারেটর ছিলো, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তা অকেজো, এখন চলে না। মা ও শিশুরা চরম দুর্গতিতে আছে, কোন বিকল্প করা যায় না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার কিছুই করার নেই।
বিদুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, পাওয়ার গ্রিড থেকে পৌর এলাকার বিদুৎ সঞ্চালন লাইনের কারেন্ট ট্রান্সফরমায় পটুয়াখালী শহরের ফিডারের ১৩৩ কেভির গ্রিড সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। নতুন ট্রান্সফরমা সংযোজন করা হয়েছিলো, তাও কেটে যাচ্ছে। দুই সংযোগ সচল হওয়ার পর, আবারো ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আমরা তিনটা থেকে বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ সকলে অবস্থান করে কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
এনএটি