ঢাকা: টেলিভিশন শিল্পীদের জন্য আলাদাভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।  

সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে টেলিভিশন শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, কুশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

এ সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম, অভিনয় শিল্পী অরুনা বিশ্বাস, শম্পারেজা, শামস সুমন, সুমন সামস, নাজনীন হাসান চুমকি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

তথ্যমন্ত্রী বলেন, টেলিভিশন শিল্পীদের জন্য আলাদাভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়ার জন্য আমাদের মন্ত্রণালয়ে আলোচনাও করেছি কয়েক দফায়। যেহেতু এটি জাতীয় বিষয়, এককভাবে আমাদের মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। টেলিভিশন একটি বড় মাধ্যম- চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়, টেলিভিশনের জন্য দেওয়া হয় না। এভাবেই শিল্পীদের ও শিল্পের সুরক্ষার জন্য আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, আগে বাংলাদেশে টেলিভিশনগুলোর কোনো সিরিয়াল ছিল না। যার যেমন ইচ্ছা ক্যাবল অপারেটররা সেভাবে প্রদর্শন করতো। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় চ্যানেলের পরে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখানো হতো। কিন্তু সেখানে একটা শৃঙ্খলা আমরা আনতে পেরেছি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভারতবর্ষে দেখানোর চেষ্টা শুরু হয় আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে। কিন্তু তিন দশকেও তা সফলতা লাভ করেনি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা পুরো ভারতবর্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি। যা একটি মাইলফলক।  

বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানোর লাগাম টেনে ধরার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পীদের কথা মাথায় রেখেই আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আমরা অচিরেই তা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। আপনারা জানেন যে, বিজ্ঞাপনচিত্র বানানো হয় বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে। অথচ আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান অভিনয় শিল্পী আছে, বিজ্ঞাপন নির্মাতাও আছেন।

তিনি বলেন, অতীতে আমাদের দেশের নির্মাতারাই অনেক ভালো বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন। যেগুলোকে শুধু পণ্যের বিজ্ঞাপন বলা যাবে না, এগুলো মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দিতো, মানুষের মধ্যে ভাবনার জন্ম দিতো, ত্রিশ বা দশ সেকেন্ডের মধ্যেই সেটিকে উপস্থাপন করা অনেক শেয়ানার, অনেক মুনশিয়ানার কাজ। সেটি আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন নির্মার্তারা বানিয়েছেন। শিল্পীরা অভিনয় করে দেখিয়েছেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ইদানিং আমরা একটি প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি যেসব বিজ্ঞাপন চিত্রই যতটা সম্ভব বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে বানিয়ে আনা এবং বিদেশি বিজ্ঞাপন ডাবিং করে বাংলাদেশে প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমরা সেটির লাগাম টেনে ধরতে চাই। সেজন্যই এরইমধ্যে আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করেছি। আরও একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।  

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানাতে হলে শিল্পী প্রতি ট্যাক্স-ভ্যাটের বাইরে সরকারকে অতিরিক্ত কর দিতে হবে। পাশাপাশি যারা প্রদর্শন করবেন, তাদেরও টাকা দিতে হবে। আর তা ডাবিং করা বিজ্ঞাপন চিত্রের জন্যও প্রযোজ্য হবে। কারণ বাইরে বানিয়ে এনে তা বাংলাদেশে ডাবিং করে- যেমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর যে পণ্য প্রদর্শন করার লাগাম টেনে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের শিল্পীরা অনেক মেধাবী, নির্মাতারাও মেধাবী। আমাদের দেশের শিল্প ও শিল্পী দুটোই যাতে উপকৃত হয়, সেজন্য আমরা এ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এছাড়া বাংলাদেশে টেলিভিশনে গত কয়েক বছর ধরে বিদেশি সিরিয়াল কিনে এনে- পঞ্চাশ কিংবা ত্রিশ বছর আগের- ডাবিং করে সম্প্রচার করা হয়। আমরা সেটার লাগাম টেনে ধরেছি। এ কাজ প্রথমে দুয়েকটি চ্যানেল শুরু করেছিল, পরে তা অনেকগুলো চ্যানেল করেছে। একটির বেশি (বিদেশি) সিরিয়াল কোনো টেলিভিশন চালাতে পারবে না। পৃথিবী এখন মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চলছে। এখন আকাশ উন্মুক্ত। কাজেই এমন পরিস্থিতিতে একটির বেশি বিদেশি সিরিয়াল কোনো টেলিভিশন চালাতে পারবে না। ইতোমধ্যেই তা আমরা কার্যকর করেছি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যখন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিই তখন শিল্পীরাই এসে আমার কাছে এমন দাবি করেছিল। দ্রুততার সঙ্গে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করেছি। এটা এজন্যই করেছি যাতে আমাদের দেশে সিরিয়াল তৈরি হয়। অতীতে আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো টিভি সিরিয়াল তৈরি হয়েছে, যা মানুষ উন্মুখ হয়ে দেখতো। আমাদের ছোট বেলায় বা আমাদের কলেজ জীবনে আমরা সিরিয়াল উন্মুখ হয়ে দেখতাম। আমাদের সেই মানের শিল্পী আছে। যারা বানিয়েছিলেন তারা এখনো বেঁচে আছেন। কাজেই বিদেশি সিরিয়াল কেন দেখানো হবে?

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
জিসিজি/আরবি