ফরিদপুর: ফরিদপুর সদর উপজেলার চর অধ্যুষিত নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের মনসুরাবাদ গ্রামে এক গৃহবধূকে কুমির কামড়ে আহত করার পর থেকে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কুমিরটি বর্তমানে মনসুরাবাদ গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ খালে রয়েছে ধারণা করে আতঙ্কিত বাসিন্দারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে জলাধারটি পাহারা দিচ্ছেন।
এদিকে রোববার (২৩ অক্টোবর) বন বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
দলের সদস্য ফরিদপুর সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সময় ফরিদপুর সদর উপজেলার চর অধ্যুষিত নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের মনসুরাবাদ গ্রামের একটি জলাধারে আশ্রয় নেয় কুমিরটি। পানি কমে গেলে সেটি ওই জলাধারে আটকে পড়ে। শনিবার ভোরে ফজরের নামাজের সময় গৃহবধূ পারুলী বেগমের (৫৫) হাঁস-মুরগিগুলো ডাকাডাকি করছিল। আশপাশে শিয়ালের উৎপাত আছে জেনে তিনি সেগুলোকে দেখতে যান। ওই সময় কুমিরটি তাঁকে কামড় দেয়। পরে পারুলীর স্বামী বাঁশ দিয়ে আঘাত করে কুমিরটি খালে নেমে যায়। এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন মনসুরাবাদ গ্রামের বাসিন্দারা।
আহত পারুলী বেগম ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারী সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী রাজ্জাক মোল্লা। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রীর হাতে তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। ডান পায়ে কুমিরের কামড়ের ক্ষত রয়েছে।
জলাধারটির চারপাশে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে চৌকিদারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জলাধারের কিছু অংশে কচুরিপানা রয়েছে। কুমিরটি সেখানেও লুকিয়ে থাকতে পারে। এ জন্য গ্রামের বাসিন্দাদের জলাধারটিতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। কুমির মাঝেমধ্যে খাবারের সন্ধানে ডাঙায় উঠে আসে। কুমিরটির দেখা পেলে জাল ফেলে আটকে বন বিভাগে খবর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মনসুরাবাদ গ্রামের কৃষক রোকন প্রামাণিক (৬৮) বলেন, তাঁকে ওই জলাধারের পাশ দিয়েই জমিতে যেতে হয়। এ ঘটনার পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে আছেন।
এদিকে কুমিরের কামড়ে গৃহবধূ আহত হওয়ার পর থেকে মনসুরাবাদ গ্রামের মানুষজন আতঙ্কিত। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. শাহাজাহান (৪৮)। তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর তিনি মাছ ধরার জন্য নদীতে নামতে ভয় পাচ্ছেন। আবার মাছ না ধরলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক বলেন, গত বছর ওই ইউনিয়নের ৩৮ দাগ এলাকায় লোনাপানির একটি কুমির খাবারের সন্ধানে ডাঙায় এলে এলাকাবাসীর সহায়তায় ধরা হয়। ৩৮ দাগ এলাকাটি মনসুরাবাদ গ্রামের নিকটবর্তী। চর–অধ্যুষিত এ গ্রামে এভাবে কুমির আসায় এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
বিষয়টি খুলনার বন্যপ্রাণী প্রকৃতি ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদল দুয়েক দিনের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
আরএ