ঢাকা: কুড়িগ্রামের চররাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্ত্তীর বিরুদ্ধে ফেসবুক মেসেঞ্জারে সহকর্মীর সঙ্গে অশোভনীয় চ্যাটিং করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এই গুরুতর অপরাধে তাকে ‘তিরস্কার’ নামীয় লঘুদণ্ড দিয়েছে সরকার।
একজন নারী সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ শাস্তির কথা জানানো হয়। অমিত চক্রবর্ত্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত থাকার সময় উপজেলার নারী এসিল্যান্ডের সঙ্গে এমন অশোভন চ্যাটিং করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কুড়িগ্রামের চররাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্ত্তী। গত ২০২১ সালের ২৫ জুলাই থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে কর্মরত থাকাকালে তার অধীন কর্মরত একজন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে অশোভন আচরণ করা, তার সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশোভন কথোপকথন, তার স্বামী যেন বদলি হয়ে নীলফামারী জেলায় না আসেন সে বিষয়ে চাপ প্রয়োগসহ তার বাচ্চা যেন রংপুরে থাকে, তিনি স্টেশনে থেকে চাকরি করেন সে বিষয়ে চাপ প্রয়োগ, তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বডি স্প্রে কিনে দেওয়া, রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন কথাবার্তা বলা, ফোন দিয়ে ভারসাম্যহীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলা, রাত ৮টা থেকে ৯টার সময় অফিসে কোন কাজ না থাকলেও অফিসে বসিয়ে রাখা, তাকে মাস্ক পরে তার সামনে বসতে নিষেধ করা, বন্ধের দিনে ফোন ওয়েটিংয়ে থাকা নিয়ে চাপ প্রয়োগ করার মতো শিষ্ঠাচার বহির্ভূত আচরণ এবং একজন মহিলা সহকর্মীর সাথে খুবই অশোভন আচরণ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় মামলা রুজু করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। একই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান কি-না তা জানতে চাওয়া হয়।
এতে বলা হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করলে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। ব্যক্তিগত শুনানিকালে সরকার পক্ষের নথি উপস্থাপনকারী কর্মকর্তা নীলফামারী জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. আব্দুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অভিযোগ বিবরণীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, একজন নারী জুনিয়র সহকর্মীর সাথে এমন অশালীন ও দৃষ্টিকটু আচরণ কাঙ্খিত নয়, অপরপক্ষে অভিযুক্ত কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্তী তার নিজের দাখিল করা লিখিত জবাব সমৰ্থন করে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন।
এতে বলা হয়, যেহেতু সরকার পক্ষ, অভিযুক্তের বক্তব্য এবং নথি পর্যালোচনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ও প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য অভিযোগটি তদন্ত করা প্রয়োজন মর্মে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখ তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত কর্মকর্তা দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ' সংঘটনের অভিযোগে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামায় বর্ণিত 'অসদাচরণ' এর পর্যায়ভুক্ত অভিযোগসমূহের মধ্যে অভিযোগকারীর সাথে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশোভনীয় কথোপকথন/চ্যাটিং করা এবং তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বডি স্প্রে কিনে দেওয়ার মাধ্যমে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক অসদাচরণ সংঘটনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উল্লিখিত প্রমাণিত কার্যকলাপ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী 'অসদাচরণ'-এর পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেহেতু অভিযুক্ত কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্ত্তীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে উপযুক্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হওয়ায় আনীত অভিযোগের মাত্রা ও প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় বিবেচনায় তাকে একই বিধিমালার ৪(২) (ক) বিধি অনুযায়ী ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড প্রদান করা হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
এমআইএইচ/এজে