ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ওবায়দুর রহমান মনেপ্রাণে গণতন্ত্রী ছিলেন: মির্জা ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
ওবায়দুর রহমান মনেপ্রাণে গণতন্ত্রী ছিলেন: মির্জা ফখরুল

ঢাকা: বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান মনেপ্রাণে গণতন্ত্রী ছিলেন। তিনি গণতন্ত্রে বহুমত সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যকে বিশ্বাস করতেন।

তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনে বিশ্বাসী, কর্তব্যনিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ ছিলেন।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) প্রয়াত এই মহাসচিবের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

বরেণ্য রাজনীতিবিদ কে এম ওবায়দুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির সাবেক মহাসচিব, স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ৬০ এর দশকের সাবেক ছাত্রনেতা এবং দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ কে এম ওবায়দুর রহমান একজন গণসম্পৃক্ত জাতীয় নেতা হিসেবে সবার নিকট সমাদৃত ছিলেন। যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরে জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র তথা সব আন্দোলন সংগ্রামে সোচ্চার থেকে তিনি আজীবন দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, মরহুম কে এম ওবায়দুর রহমান মনেপ্রাণে গণতন্ত্রী ছিলেন এবং গণতন্ত্রে বহুমত সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যকে বিশ্বাস করতেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে যেভাবে নিবেদিত থেকেছেন সেজন্য দেশবাসীর নিকট তিনি চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন। মন্ত্রী হিসেবে দেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজে তিনি কখনোই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বিসর্জন দেননি। স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে ওবায়দুর রহমান ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ অনুসারী।

কে এম ওবায়দুর রহমান একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন। তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দা থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে যে তিনজন নেতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, তাদের একজন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শরণার্থী ক্যাম্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের জন্য ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকার তাকে পুরস্কৃত করে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ এবং পরে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠায় ও শক্তিশালী করতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মিছিলে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় অংশ নিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এরপর ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান, ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে টানা সাড়ে তিন বছরসহ প্রায় সাড়ে ১৩ বছর কারাবন্দি ছিলেন। কারাগারে বন্দি অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৪০ সালের ৫ মে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। ১৯৫২ সালে নগরকান্দা এম এন একাডেমির ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৫৬ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৫৭-৫৮ সালে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২-৬৩ মেয়াদে ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে এম এ পাস করেন। ১৯৬৬ থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী কেএম ওবায়দুর রহমান ২০০৭ সালের ২১ মার্চ ইন্তেকাল করেন। তার একমাত্র মেয়ে শামা ওবায়েদ ইসলাম বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
এমএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।