বরিশাল: বরিশাল মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ প্রভাবশালী সদস্য ছাড়াই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তালিকা প্রকাশ করেছেন নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।
তার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ১৬ সদস্যের ওই পরিচালনা কমিটির প্রথম সদস্য অ্যাডভোকেট কে বি এস আহম্মেদ কবীর।
কমিটিতে ২ নম্বর সদস্য হলেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক।
পর্যায়ক্রমে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন আহমেদ শহীদ, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন, রেজাউল হক হারুন, বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি আফতাব হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মো. হুমায়ুন কবির, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন সিকদার, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান, সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ও বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজছাত্র কর্মপরিষদের ভিপি মঈন তুষার।
এদের মধ্যে বেশিরভাগই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের ঘনিষ্টজন ছিলেন। আর যাদের কমিটিতে রাখা হয়নি তারাই সবাই বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্টজন।
কমিটিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের নাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, এখানে আমি কোনো বিভাজন বা কাউন্টার পার্ট করতে চাই না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনায়ন দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা বা যারা এখানে আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আছেন তারা যদি আমার সঙ্গে না আসেন তাহলে আমি কী করবো। তারা না এলে আমার কিছু বলার থাকে না, তারা আসলে আমি ওয়েলকাম জানাবো, কিন্তু তারা কী আসছে?
তিনি বলেন, আমাকে তো একটা নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে, সেজন্য আমার কমিটি দরকার। আর কমিটি ছাড়া আমি একা এ কাজ পারবো না। নির্বাচন পরিচালনা করতে গেলে অনেক রকম কাজ আছে, সেখানে তো একজন প্রার্থী হয়ে আমার একার পক্ষে সব করা সম্ভব না। আমাকে একটি কাঠামো তৈরি করতেই হবে।
এদিকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার ঘনিষ্টজনদের কাউকে না রাখার বিষয়টি প্রার্থীর এখতিয়ারের বিষয় বলে দাবি করেছেন কমিটিতে থাকা অন্য নেতারা।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নৌকার প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, কমিটি প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন, এটি তার এখতিয়ারের বিষয়। তবে আমি মনে করি কমিটিতে কে থাকলো বা না থাকলো সেটা বড় বিষয় নয়। যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশ্বাস করেন, আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন, তারা নৌকার প্রার্থীর হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করবেন।
দলীয় মনোনায়ন পাওয়ার পর প্রার্থী দীর্ঘদিন বরিশালে রয়েছেন। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এখনও কোনো কর্মসূচি না থাকায় হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি।
যদিও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীরকে শুরু থেকেই নৌকার প্রার্থীকে সংবর্ধনা ও প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। এছাড়া সর্বশেষ ঢাকায় থেকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একটি ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং নৌকার মনোনায়ন যাকে দিয়েছেন আমরা তার পাশে থাকবো। আমরা আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কর্মকাণ্ডে থেকে বিরত নেই, যার যার মতো করে নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য সবাইকে বলছি।
তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়ে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। যেখানে এ নির্বাচনে আমরা বিজয়ের লক্ষ্যে কীভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবো সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যৌথ সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে আমরা নির্বাচন পরিচালনায় মাঠে নেমে পড়বো। আমরা আওয়ামী লীগে যারা আছি তারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।
তবে নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না আসার জন্য শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ওয়ার্ডের নেতাদের নিরুৎসাহিত করেছেন বলে খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের সময়কালীন মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২৩
এমএস/আরবি