ঢাকা: জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেছেন, একটি গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের আগামী নেতৃত্ব বাছাই করে নেবে জনগণ। তাই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে ভিন্নপথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা সফল হবে না।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যোগদান ও তার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থনে অনুষ্ঠিত সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আন্দোলন লড়াইয়ের নামে দেশে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে রাজপথে তা প্রতিহতের আহ্বান জানান।
রওশন এরশাদ বলেন, নতুন পুরাতন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। পার্টিকে শক্তিশালী করতে নবাগতদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, মনে রাখতে হবে দেশের জনগণের বিশেষ করে ৬৮ হাজার গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া অসহায় ছিন্নমূল মানুষের কল্যাণ পল্লীবন্ধু এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে এরশাদপুত্র ও রংপুর- ৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহাগির আল মাহি সাদ এরশাদ বলেন, বাবা এরশাদ লাখ লাখ অনুসারি ও নেতাকর্মীদের নিয়ে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। কারো নাম ডাক প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। কেউ যদি পার্টিকে নিজের একক সম্পদ মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নতুন-পুরাতন, নবীন-প্রবীণ নেতাকর্মীরা সবাই এরশাদের রাজনৈতিক সন্তান। এরাই পার্টির প্রকৃত মালিক। দল চলবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে, কেউ নিজের তত্ত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা এমপি বলেন, নেতা এরশাদকে হারিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কঠিন সময় আমাদের পাশে অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন পল্লীবন্ধুর স্ত্রী ও তার সন্তান। আমরা সাদ এরশাদকে নিয়ে আগামীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাল্লাহ। ক্ষোভ প্রকাশ করে রাঙা বলেন, অবৈধভাবে পল্লীবন্ধুর প্রকৃত সৈনিকদের দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা এসব করছেন, তারা মনে রাখবেন সময় অপেক্ষা করছে, জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
প্রধান বক্তা হিসেবে জাতীয় পার্টি ও বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদ বলেন, পল্লীবন্ধুর রূহানি সন্তানদের অন্ধকারে রেখে জিএম কাদের অবৈধ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখল করে বেঈমানি করেছেন। শত শত নেতাকর্মীর মতো দলের নির্বাচিত মহাসচিবকেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় বহিষ্কার করে রাজনৈতিকভাবে অপমানিত করেছেন।
তিনি বলেন, শিগগিরই দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর শুর হবে। এসব সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দেবেন পল্লীবন্ধুপুত্র সাদ এরশাদ। দল ছেড়ে যাওয়া ও ত্যাগি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব ও দশম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসীহ্' বলেন, রওশন এরশাদের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। সেখানে জিএম কাদেরও থাকবেন। পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক মৃধা, রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্য়্ক রফিকুল হক হাফিজ, সাবেক এমপি এমএ গোফরান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল ইসলাম নূরু, শাহ জামাল রানা প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর জাপার আহ্বায়ক জহির উদ্দিন জহিরের সঞ্চালনায় যোগদানকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দয়াল কুমার বড়ুয়া, পীরজাদা জুবায়ের আহমেদ, নাফিস মাহবুব, মেজর অবসরপ্রাপ্ত শিবলী মোহাম্মদ সাদিক ও জাফর ইকবাল নিরব।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, কেন্দ্রীয় নেতা মোল্যা শওগত হোসেন বাবুল, মিজানুর রহমান মিজান, নাসির উদ্দিন মুন্সী ইসরাফিল হোসেন এজাজ আহম্মেদ খান ও আবু সাঈদ লিয়ন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২৩
এসএমএকে/এএটি