ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অত্যন্ত সংকটময় একটি মুহূর্ত অতিক্রম করছি। এ সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যে যেখানে আছি, যে অবস্থায় আছি, সেখান থেকে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
বুধবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে আয়োজিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আজকে পুরো বিশ্ব এ কথাটি স্বীকার করে নিয়েছে, বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার কোনো জায়গা নেই। এখন বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসকদের হাতে পড়ে গণতন্ত্রের যে মূল স্তম্ভ বাক স্বাধীনতা সেটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে করে ফেলেছে। পুরো বিশ্বের যারা মুক্ত স্বাধীনতা, গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন, তারা সবাই এক বাক্যে বলছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, মুক্ত সাংবাদিকতা নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, ভিন্নমত সহ্য করার মতো এখনকার শাসকগোষ্ঠীর মানসিকতা নেই। তারা তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য, একদলীয় শাসনকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে অত্যন্ত তীব্রভাবে, বল প্রয়োগ করে মানুষের ভিন্নমত পোষণ করা অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে।
তিনি বলেন, প্রতিবাদ না করলে, প্রতিবাদে সোচ্চার না হলে এবং রুখে না দাঁড়ালে কখনো দাবি আদায় করা যায় না। আজকে বাংলাদেশের সামনে একটি সত্য এসে উপস্থিত হয়েছে। এখানে নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এখানের মানুষ কখনও নিজের ইচ্ছায় নিজের মত প্রকাশ করতে পারবে না ভোট প্রদানের মাধ্যমে যদি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আজকে প্রত্যেকেই এ কথায় এসে দাঁড়িয়েছে, বর্তমান সরকার থাকলে নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না।
আওয়ামী লীগ, সরকার সব সময় জনগণকে মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করতে চায় অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, তাদেরকে পরিষ্কার করে বলে দিতে হবে, এনাফ ইজ এনাফ। মানুষকে অনেক কথাবার্তা বলে বোকা বানিয়েছ। এতদিন বলে এসেছেন, উন্নয়ন হবে৷ উন্নয়ন কি আমাদের চোখে পড়ে না। আমরা কি চোখে ঠুলি দিয়েছি৷ সেই উন্নয়ন এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আজকে অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, এখন যে সময় যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে এত খারাপ সময় আর আসেনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার তৈরি করতে হবে। যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে, দায় থাকবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে সংগ্রামে জয়ী হতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ইদানিং পত্রিকায় খবর এসেছে, আমেরিকা থেকে নাকি প্রচুর রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু আমেরিকায় যারা যায়, তারা দেশে এসে কোনো বিনিয়োগ বা লগ্নি করে না। তারা সেখানেই থাকে, প্রয়োজনে এখানকার বাড়িঘর বিক্রি করে দেয়। আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স আসার মূল কারণ হচ্ছে, যারা কোটি কোটি টাকা পাচার করে সে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেখেছিল, দেখা যাচ্ছে সেটি এখন নিরাপদ নয়। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করায় সেসব পাচার করা টাকা দেশে পাঠানো শুরু করেছে। সরকার আবার ঘোষণা দিয়েছে, পাচার করা টাকা ফেরত আনলে নাকি আড়াই পার্সেন্ট ইনসেন্টিভ দেওয়া হবে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে আমাদের আজ এসব দেখা লাগছে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এখনো গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। অনেক প্রতিথযশা রাজনীতিবিদরা শহীদ হয়ে গেছেন। যেসব কর্মীরা রাজপথে রক্ত দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দিনের পর দিন হয়রানি করা হচ্ছে। সেই ওয়ান ইলেভেনের সময় যে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আজও উঠিয়ে নেওয়া হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের মামলা নিষ্পত্তি করে ফেলেছে। বিএনপির প্রতি তাদের অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আর নয়, এখন আর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় এখন বেরিয়ে আসতে হবে। ভয়কে জয় করে তাদের পরাজিত করতে হবে। এবং একটি গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেখানে সাংবাদিকরা লিখতে পারবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা হবে না। সত্য লেখার জন্য কাউকে হত্যা করা হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায় করে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
এসসি/জেএইচ