সিরাজগঞ্জ: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি দুইভাগে বিভক্ত। ভারতীয় আধিপত্যবাদের পক্ষে আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলো।
ভারত পেয়াঁজ আলু বন্ধ করল কিনা, আগামীতে আমরা ভারত থেকে কোনোকিছুই আমদানি করবো না। ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালালি যদি না করি কারও কাছে আমাদের হাত পাততে হবে না।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে অনেকেই মনে করেন ভোট দিলেই তো বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। ভোট যত পিছানো যায় চেষ্টা করি। তিন মাস, ছয় মাস, নয় মাস, এক বছর। পিছাইয়া কোনো লাভ নাই। যখনই নির্বাচন হবে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে ইনশাল্লাহ। হাসিনা যেমন বলছে কার জন্য ভোট দেব, ওই তারেক আইস্যা দেশ চালাইবে ওর জন্য। আজকেও অনেকেই সেটাই মনে করছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা অনেক ধৈর্য ধরেছেন আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে। আবার এইটা মনে করবেন না যে আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। বিএনপি যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে তার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো আছে। বিএনপিকে আসতে দিতে চায় না কারণ, বিএনপি এলেই এই দেশের মানুষের উন্নয়ন হবে। অর্থনীতিতে বিরাট একটা পরিবর্তন হবে। সেই কারণে বিএনপিকে আসতে দেওয়া যাবে না। তাইলে ভারতের দিকে থেকে হাত পেতে বসে থাকবে কে?
১৭ বছর যদি কষ্ট করতে পারেন আর কয়েক মাস কষ্ট করতে পারবেন না? ইনশাল্লাহ পারতেই হবে। যারা পঙ্গু হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সন্তান হারিয়েছেন, যাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালানো হয়েছে অবশ্যই সেইসব পরিবার ও ব্যক্তিকে দলের পক্ষ থেকে আমরা সাহায্য করবো। ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে যারা মারা গেছেন তাদের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। তাদের সহযোগিতা রাষ্ট্রও দিচ্ছে আমার নেতা তারেক রহমানও দিচ্ছেন।
সালাম আরও বলেন, গত ১৭ বছর এই রকম কর্মীসভা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। এলাকায় হাঁটাচলা করা যেত না, ঘরে থাকা যেত না, বাজারে চলা যেত না। এমনি অবস্থা আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছিল। সিরাজগঞ্জে খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের শাস্তি দিয়েছিল। ৭ জনকে পুড়িয়ে মেরেছিল। অসংখ্য নেতাকর্মীকে দীর্ঘদিন বাড়িছাড়া করা হয়েছিল। তারপরও বিএনপিকে ধ্বংস করা যায় নাই।
আব্দুস সালাম বলেন, ৭২ থেকে পঁচাত্তর এই দেশের গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ খেয়ে ফেলেছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল না, এমনকি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিও ছিল না। না খেয়ে মানুষ বেওয়ারিস লাশ হয়ে পড়ে থাকতো। ইতিহাস থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা গ্রহণ করে নাই। যদি করতো তাহলে গত ১৫ বছর আগের মতোই নির্যাতনের পথ বেছে নিতো না।
স্বাধীনতার পরে পল্টন ময়দানে মওলানা ভাষানী বললেন মুজিব তোমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগকে থামাও। এরা দেশটা লুটপাট করে খাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বললেন- এত কষ্ট করেছে নেতাকর্মীরা না হয় কিছু খাইলোই। খাইতে খাইতে শেখ মুজিবরেও খেয়ে ফেলেছে। আর ৫ আগস্টের আগে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারে নাই, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য জায়গা দখল, চাকরি থেকে বিতাড়িত করেছে। মনের মধ্যে তো ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, আপনারা এই মুহূর্তে হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে যাবেন না। কিন্তু আমাদের নেতার নির্দেশে কোথাও কিছু হয় নাই। তাই আওয়ামী লীগ আর বিএনপিকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের সঞ্চালনায় ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় কর্মীসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
আরএ