ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

১৪ বছর পর না.গঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিল 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৩
১৪ বছর পর না.গঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিল 

নারায়ণগঞ্জ: দীর্ঘ ১৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৭ জুন। কেন্দ্রের নির্দেশে সম্ভাব্য এ তারিখ নির্ধারণ করেছে জেলা বিএনপি।

 

শুক্রবার (২ জুন) জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে কাউন্সিলকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি শঙ্কাও বিরাজ করছে।  

জানা যায়, বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির অধীন ১০টি ইউনিট কমিটিতে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। কাউন্সিলকে ঘিরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। এর মধ্যে দলের এ আন্দোলনমুখী সময়ে কাউন্সিলকে ঘিরে দলে অন্তঃকোন্দল ও সংঘর্ষের শঙ্কাও করছে নেতাকর্মীরা।

জেলা বিএনপির অধীন ১০টি ইউনিট হলো- ফতুল্লা থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, আড়াইহাজার উপজেলা, রূপগঞ্জ উপজেলা, সোনারগাঁ উপজেলা, সোনারগাঁ পৌরসভা, আড়াইহাজার পৌরসভা, গোপালদী পৌরসভা, তারাব পৌরসভা, কাঞ্চন পৌরসভা।  

এর মধ্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ১০টি ইউনিট কমিটির মধ্যে বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ৫টি ইউনিট ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ফতুল্লা পূর্ণাঙ্গ হওয়া বাকি আছে। সোনারগাঁ উপজেলা, সোনারগাঁ পৌরসভা, আড়াইহাজার উপজেলা, আড়াইহাজার পৌরসভা, গোপালদী পৌরসভার কমিটি জেলা বিএনপির বিগত আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে গিয়েছিল। এর মধ্যে কাউন্সিল তথা ভোট ছাড়া সোনারগাঁ থানা, পৌরসভাসহ কয়েকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।  

দলীয় সূত্র মতে, ১০টি ইউনিট বিএনপির ১০১ সদস্য করে সর্বমোট ১ হাজার ১০ জন কাউন্সিলর আসন্ন জেলা বিএনপির কাউন্সিলে ভোট দিয়ে জেলা বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতারা, জেলা বিএনপির কেন্দ্রে পদায়ন হওয়া নেতারা, জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ডেলিগেট হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।   

এদিকে কাউন্সিলের আগেই বিগত জেলা কমিটি ঘোষিত ৫টি ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে দলের জেলা বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়। ইতোমধ্যে নতুন কমিটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।  

দলের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি জেলা বিএনপির এক সভায় জেলা বিএনপি নেতারা কাউন্সিল করার জন্য কিছুদিন সময় চান। পরে তাদের সময় দিয়ে সম্ভাব্য তারিখ ১৭ জুন নির্ধারণ করা হয়। তবে কাউন্সিলের জন্য অনুমতি পাওয়া, দলের আন্দোলনের নানা কর্মসূচি, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শসহ নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে কাউন্সিল ১৭ তারিখ থেকে আগানো বা পেছানোর বিষয়। কিছুদিন আগে কাউন্সিলের কথা উঠলেও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কদের অনুরোধে সেটি পেছানো হয়।

সভায় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারাগার থেকে বের হয়েছেন। ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়করা কারাগার থেকে বের হয়েছেন। এছাড়া দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কারাগারে আছেন এবং বের হচ্ছেন যাদের বিভিন্ন পুরাতন মামলায় জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এহেন অবস্থান যখন দলের আন্দোলন-সংগ্রাম চলমান তখন এ ধরনের কাউন্সিল এ সময়ে দলে অন্তঃকোন্দল বাড়াবে এবং দলে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। আর তাই স্থান-কাল বুঝে এ মুহূর্তে কাউন্সিল না করে সেটা পেছাতে অনুরোধ করেন নেতারা।  

সভায় নেতারা বলেন, এখন সময় আন্দোলনের। আমরা পুলিশের সঙ্গে খেলবো, হাজিরা দেব না কি নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করবো। কাউন্সিলকে ঘিরে কাদা ছোড়াছুড়ি হবে অনেক। তবে যদি সবকিছু সমন্বয় করে দ্রুততম সময়ে সেটি করা যায় তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনে নেতাকর্মীদের আগ্রহ অনেক।

জেলা বিএনপি নেতারা জানান, কাউন্সিলে ১০১ জন করে প্রতি ইউনিটের ভোটার থাকার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে যেহেতু এখন বিরোধী দলের সময় ও কাউন্সিল সুন্দরভাবে করতে হবে তাই পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভোটারের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে।

এর আগে ২০০৩ সালে শহরের চাষাঢ়ায় বিএনপির ক্ষমতাকালীন জিয়া হলে দলের কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক হন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও সিনিয়র সহ-সভাপতি হন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও তৎকালীন সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে শহরের আলী আহমেদ চুনকা পাঠাগারে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তৈমূরকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেন কাউন্সিলররা।

এবার কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের, যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদের, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে জোরালো আলোচনায় আছেন বর্তমান সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তাদের ঘিরে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তাদের অনুগতরা।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমরা কাউন্সিলের জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছি। এর মধ্যে আমাদের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের খবরে উচ্ছ্বাসিত। সবার সঙ্গে আলোচনা করে ও কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি সুন্দর কাউন্সিল জেলা বিএনপি করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২৩
এমআরপি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।