ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছে ১৪ দলীয় জোট। ১৪ দলের বৈঠকে এ মত ব্যক্ত করা হয়েছে বলে জানান জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
রোববার (৪ জুন) ইস্কাটনের নিজ বাসভবনে ১৪ দলের বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান।
আমু বলেন, মার্কিন ভিসানীতি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনাহূতভাবে আসায় তা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক মনে হচ্ছে। এটি কারো কারো পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, জাতি সংবিধানের প্রতিটি প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করি না।
আপনারা ভিসানীতির সমালোচনা করছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তাদের টার্গেট করে এটা করা হয়নি- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আমির হোসেন আমু বলেন, আমরা ভিসানীতিকে অনাকাঙ্ক্ষিত মনে করি। আরেকটি কথা হলো এটা তো ১৪ দল। আওয়ামী লীগের মিটিং না। মনে রাখবেন। আমরা তো রাবার স্ট্যাম্প না। এখানে আরও ১৩টি দল আছে, সবাই তো আওয়ামী লীগ না, এটি আপনাকে মনে রাখতে হবে। এখানে কথা হলো, ১৪ দল যা ফিল করে, তা-ই বলবে। অন্য দল কে কী বলবে, তা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের আলোচনায় যা আসবে, তা আমরা প্রকাশ করব।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি যারা নির্বাচনকে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বানচাল করতে চায়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য এটি সহায়ক হতে পারে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কথাগুলো বলতে চাই। এখানে যদি অন্য কোনো দেশের সন্দেহ থাকে, তাহলে তারা বসে এটা ঠিক করতে পারে যে, সংবিধানের ভেতরে কোথাও কোনো ফাঁকফোকর আছে কি না, সেটা তারা বিবেচনা করুক। সেগুলো দেখুক, আলোচনা করুক। কিন্তু সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হতে হবে। দেশে এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। সংবিধানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, অন্য কোনো উপায়ে আঘাত আসুক, এটা আমরা চাই না।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই জাতি সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো দলই জাতির বাইরে না, জনগণের বাইরে না, দেশের বাইরে না। জনগণের ওপর আস্থা থেকে, সংবিধানভিত্তিক নির্বাচনে আস্থা থেকে সবারই অংশগ্রহণ করা উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই। কোনো দলের পক্ষে জনস্রোত থাকলে এই স্রোতের বাইরে প্রশাসনও যেতে পারে না। সেদিকেই নির্বাচন ধাবিত হয়।
আমু জানান, বৈঠকে দ্রব্যমূল্য বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১৪ দল। জোটের পক্ষ থেকে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলম ও কাগজের দাম বাড়ানো পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। সংবাদপত্রের ওপর ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা মনে করি, কাগজ-কলমের দাম কমানো উচিত। আরোপিত কর প্রত্যাহার করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব রকম চেষ্টা করছেন। আমাদের দেখতে হবে সরকার সচেতন কি না, প্রচেষ্টা আছে কি না। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে থাকলে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আগামী ৬ জুন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৪ দল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বিকেলে একটি জনসভা করবে।
১৪ দলের এ বৈঠকে আমির হোসেন আমু সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, গন আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
এসকে/আরএইচ