ঢাকা: দেশের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার, ধর্মের ছদ্মাবরণে উগ্রবাদ ও নাশকতার চেষ্টা ইত্যাদিসহ মিথ্যাচার ও ভ্রষ্টাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্য জোট।
শনিবার (২৪ জুন) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা ২০০৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার নানামুখী ষড়যন্ত্র করেছিল। ২০০৮ এর নির্বাচন বানচাল, পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নানামুখী ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। শাসনভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার দ্রুততম সময়ে দেশের নজিরবিহীন উন্নতি করে চলছে। ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়- কলেজসহ নানান অবকাঠামোসহ টেকসই উন্নয়নের জোয়ার দেখে বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে বাংলাদেশকে লক্ষ্য করছে। পদ্মার মত দুরূহ নদীর বুকে নিজ অর্থায়নে সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পাতাল রেল ইত্যাদি নির্মাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন আমরাও পারি। যারা ধাক্কা দিয়ে সরকার ফেলে দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, তারা হতাশ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, বয়কট, আংশিক অংশগ্রহণ প্রতিরোধ ইত্যাদি নাটক করে, কোনো কুল কিনারা করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়,ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের কাঁধে ভর করে বাংলাদেশকে নিজেদের তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত শুরু করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এজেন্টদের মাধ্যমে সরকারকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশে সমাজবাদীরা চায় তাদের আজ্ঞাবহ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। এ লক্ষ্যে তাদের দেশীয় এজেন্টদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তার পিতা বাংলাদেশর স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণে আত্মমর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বাঁচার প্রেরণা যোগাচ্ছেন। বারবার হত্যার চেষ্টা চালিয়েও ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে দমাতে পারেনি।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন লিবিয়ার উন্নয়নের রূপকার মোহাম্মদ গাদ্দাফির পতন ঘটাতে যেসব দালাল ভূমিকা রেখেছিল বর্তমানে তাদের পরিণতি এবং লিবিয়ার জনগণের দুর্দশা। একইভাবে সাম্রাজ্যবাদী লুটেরা ইরাক ও সিরিয়ায় মঙ্গোলিয়ান স্টাইলে দেশগুলিকে কীভাবে ধ্বংস করছে। মুখে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অধিকারের নসিহত করে ৬০ বছর যাবত ফিলিস্তিনের নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষকে হত্যার ইন্ধন যোগাচ্ছে, তাদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে। শতাব্দীব্যাপী পৃথিবীর বহু দেশে হস্তক্ষেপ করে এই পরাশক্তিরা মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে দেশগুলিকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতায় আজ্ঞাবহ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তথা কথিত ভিসা, নীতি স্যাংশন ইত্যাদির ভয় দেখাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের মানুষ বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদীদের মতলব বুঝতে পেরে তাদের পরিত্যাগ শুরু করেছে। বাংলাদেশে কিছু ধর্মবাদী ও ক্ষমতালোভীদের দেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মাধ্যমে নানান অপতৎপরতা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার বহুমুখী কার্যক্রম শুরু করেছে। একশ্রেণির তথাকথিত পীর নামধারী ব্যক্তি মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে, কিংবা কার্যক্রম চালিয়ে ধর্মের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি রুখতে বেশকিছু কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এগুলো হলো- আগামী ১৫ জুলাই বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল, ১৭ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের সব থানা এলাকায় জনসভা, পথসভা ও কর্মী সমাবেশ, ২৯ জুলাই গুলিস্তানের বশির অডিটরিয়ামে সুধী সমাবেশ, যেখানে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ওলামা ও পীর মশায়েখ উপস্থিত থাকবেন; ১ আগস্ট থেকে পুরো মাস বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে শহীদদের স্মরণে নানান কর্মসূচি পালন এবং ৭ অক্টোবর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ। এছাড়া জোটের সব কয়টি মহানগর, জেলা ও উপজেলা সংগঠন মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে নানান কর্মসূচি পালন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
এইচএমএস/এমএমজেড