ঢাকা: ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই বেকায়দায় পড়েছে তখনই জঙ্গি হাতিয়ার ব্যবহার করেছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে আওয়ামী লীগ সরকারের জঙ্গি প্রচারণা নিয়ে ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলে।
মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনায় প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন হয় নাই। এর সঙ্গে অন্যকোনো রাষ্ট্রের বা গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে কি না তা পুনঃতদন্তের প্রয়োজন আছে। আন্দাজ, অনুমান ও কল্পিত কাহিনীর মাধ্যমে বিচার করায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সবাই খালাস পেয়েছে। ৪০০ বছরের ফৌজদারি মামলার ইতিহাসে ভারতীয় উপমহাদেশে এমন একটি নজির নাই যেখানে দ্বিতীয়বার স্বীকারোক্তি নিয়ে একজন মানুষকে সাজা দেয়া যায়। যা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় ডিজিএফআই-এর বিশেষ সেলে আটক রেখে মুফতি হান্নানকে দিয়ে তারেক রহমান, আলী আহসান মুজাহিদ, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ শীর্ষ বিরোধী নেতাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। জঙ্গি ইস্যু ব্যবহার করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির শফিকুল ইসলামের মতো শীর্ষ রাজনীতিবিদকে সন্ত্রাসী হিসেবে জেলে আটকে রেখেছিল। ধর্মীয় উগ্রবাদকে সামনে এনে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার নামে বিগত সরকার বিরোধী দল ও মতকে দমন করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের অনুকম্পায় ক্ষমতায় টিকেছিল।
সভাপতির বক্তব্যে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পতিত আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানা রকম অপকৌশল অবলম্বন করেছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল জঙ্গি দমনের নামে মানুষ হত্যা। তারা পশ্চিমা বিশ্বসহ ভারতকে দেখাতে চেয়েছিল বাংলাদেশে ইরাক, সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মত উগ্রবাদী জঙ্গি রয়েছে। যে জঙ্গিরা শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের জন্য হুমকি। আওয়ামী সরকারই এই জঙ্গিবাদ দমন করতে পারবে। বিশ্ববাসীর কাছে জঙ্গিবাদ দমনে আওয়ামী লীগ নিজেকে রোল মডেল হিসেবে দাবি করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার কৌশল অবলম্বন করেছিল। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে তারা বার বার নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জঙ্গি তকমা লাগিয়ে নানা রকম নাটক সাজিয়ে হত্যা করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে দাড়ি রাখা, টুপি পরা, বোরকা পরা, মসজিদে নামাজ আদায় করা ব্যক্তিদের টার্গেট করা হতো। এমনকি যেসব বাসা-বাড়ি থেকে ফজরের নামাজ আদায়ে মসজিদে যেত তাদেরকে টার্গেট করা হতো জঙ্গি আখ্যায়িত করার জন্য।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট নানা রকম পুরস্কার, পদোন্নতি ও প্রণোদনা বিনিময়ে জঙ্গি ধরার অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। বিগত সরকারের আমলে পরিস্থিতি দেখে মনে হতো সারা দেশ জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, র্যাব, পুলিশ, ডিবি, গোয়েন্দা সংস্থা কার আগে কে তথাকথিত জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার করবে, মিডিয়া কাভারেজ নেবে, দেশে-বিদেশে বাহবা কুড়াবে, যেকোনো মূল্যে জঙ্গি দমনের সাফল্য দেখাতে হবে - এমন পরিস্থিতি চলছিল। তথাকথিত সাফল্য দেখাতে গিয়ে এসব বাহিনী তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় একের পর এক জঙ্গি নাটক সাজিয়ে বহু মানুষ হত্যার মাধ্যমে অনেক পরিবারকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। প্রায় সব জঙ্গি দমন ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো গল্প সাজানো ছিল।
‘দেশকে জঙ্গি তকমা দেয়া ছিল আওয়ামী শাসকদের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান হাতিয়ার’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রাইম ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। ছায়া সংসদটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক নয়ন মুরাদ, সাংবাদিক আহমেদ সরওয়ার ও সাংবাদিক রিয়াজ রায়হান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৪
এমএমআই/এসএএইচ