ঢাকা: সরকার পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা দিয়েছে ১২ দলীয় জোট। বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি পেশ করেন জোটের নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, দেশ এক ভয়ানক নৈরাজ্যের কবলে। বিনা ভোটের অবৈধ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেড় দশক ধরে। জনগণের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। শ্বাসরুদ্ধ জাতির সামনে এ অবিবেচক হিংস ক্ষমতালোভী সরকারের পদত্যাগই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায়। জাতি আজ যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকেই একমাত্র তথাকথিত সাংবিধানিক উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, ১০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আদলে বিজয়ী হওয়ার দূরভিসন্ধি মাত্র। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, কারও ইচ্ছামাফিক গায়ের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দুর্নীতি ও লুটেরাদের স্বর্গরাজ্য বানাবার জন্য নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া না, এমনকি সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাও বহন করছে না। ভোটাধিকার ছাড়া আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। গণতন্ত্র কল্পনাও করা যায় না। এক দল, এক দেশ, এক সরকার বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের চরিত্রের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রে কোনো প্রতিষ্ঠান সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ পালন করছে।
জাতীয় পার্টির (জাফর গ্রুপ) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের অজুহাতে সরকার সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী আনয়ন করেছে অথচ তা আদালতের রায়ের আলোকে নয়। আইন আদালত এর তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ অসংবিধানিক ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। নৈতিকভাবে, দেউলিয়া, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারে আস্থাশীল নয় এমন একটি দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবীদার হতে পারে না। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি মূলত আওয়ামী লীগের। এ আন্দোলনে রাজপথে রক্ত ঝরেছে, ১৭৩ দিন হরতাল অবরোধ দিয়ে চরম দুর্দশা ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের এমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই যারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে আনুগত্যশীল নয়। এমন কোনো দল নেই যারা নির্বাচনবিহীন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠেছে আমরা ১২ দলীয় জোট বিএনপি নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত অভীষ্ট পর্যন্ত এগিয়ে নেব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর এমনই এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১২ দলীয় জোট আত্মপ্রকাশ করে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাজপথে আমরা যুগপৎ ভাবে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছি। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার ও বিনির্মাণে ২ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ থেকে সব দাবি, এক দফা এক দাবিতে পরিণত হলো। সরকারের পদত্যাগ সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের এক দফা দাবিই দেশ ও জনগণের দাবিতে রূপ নিলো।
এ সময় আগামী ১৮ জুলাই সারাদেশে আন্দোলন পদযাত্রা এবং ১৯ জুলাই উত্তরায় পদযাত্রার কর্মসূচি দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে ১২ দলীয় জোট।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৩