ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ (শুক্রবার ১৪ জুলাই)। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
সাবেক এ রাষ্ট্রপতির কীর্তি অক্ষয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশে। দীর্ঘ ৯ বছর রাষ্ট্রপ্রধান থাকায় বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নে তার অবদান রয়েছে।
এরশাদ ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলায় তার নানার বাড়িতে জন্ম নেন। তার পৈতৃক নিবাস অবিভক্ত ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শহরে।
তার বাবার নাম মৌলভী মকবুল হোসেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। তার পিতামহ মৌলভী শাহাদৎ হোসেনও ছিলেন একজন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং তিনিই ছিলেন কুচবিহার অঞ্চলের প্রথম মুসলিম আইনজীবী। এরশাদের মায়ের নাম মজিদা খাতুন।
এরশাদ ছিলেন নয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান এবং চার ভাইয়ের মধ্যে প্রথম। তার ডাকনাম ছিল পেয়ারা। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনহাটায়। দিনহাটা হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।
মেট্রিক পাসের পর দিনহাটা ছেড়ে এরশাদ ১৮৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। এ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ক্রীড়া ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে যুক্ত হন। ১৯৫০ সালে তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পাস করেন। পরে তার বাবার ইচ্ছায় তিনি এম.এ. করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোহাট সেনানিবাসে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ময়মনসিংহের স্বনামধন্য খানসাহেব উমেদ আলি সাহেবের কন্যা রওশন আরা ডেইজিকে বিয়ে করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়েন তিনি। ১৯৭৩ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে তিনি আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৭৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার তার মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে সেনাপ্রধান হিসেবে এরশাদ ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং তিনি এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনীতি এবং সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করেন। রাজনৈতিক দল গঠনের পর তিনি দেশে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসন লাভ করে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।
১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এরশাদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর তিনি জাতীয় সংসদে ভাষণ দিয়ে সামরিক আইন তুলে দেন।
উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-সংস্কার কর্মসূচিতে দেশ পরিচালনার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন এরশাদ। তার দু’টি কালজয়ী স্লোগান হচ্ছে ‘৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ এবং ‘মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’। গ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য তিনি ১৯৮৬ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার শেরে বাংলা নগরে বিশাল কৃষক সমাবেশে ‘পল্লীবন্ধু’ উপাধি পান।
তার যুগান্তকারী কার্যক্রম হচ্ছে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের সব মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা, ভূমি সংস্কার, ওষুধ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পথকলি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠাতা, গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন, গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ ঘটানো, শান্তি মিশনে সেনা পাঠানো এবং সারাদেশে ৫০৮টি বড় ধরনের ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও ১০ হাজার কিলোমিটার নতুন পাকা রাস্তা নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন।
তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সংস্কারে তিনি এদেশের সব খাতেই অবদান রেখেছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মনে যেভাবে জায়গা করে নিয়েছেন, তা অমলিন থাকবে চিরকাল।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এসএমএকে/জেএইচ