ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী পক্ষ বিএনপির মধ্যে সমঝোতার সব পথ বন্ধ হয়ে আসছে। গত ১২ জুলাই দুই দলের পক্ষ থেকে যে ‘এক দফা’ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে সমঝোতার সম্ভাবনা প্রায় পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
সংবিধান সম্মত নির্বাচনের ‘এক দফা’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থানকে আরও শক্তভাবে তুলে ধরেছে। পাশপাশি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার শক্ত অবস্থান প্রকাশ করেছে বিএনপি।
এর ফলে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ থাকছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে না এলে দলটিকে ছাড়াই সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করা হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।
১২ জুলাই রাজধানীর নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি তুলে ধরে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ওই দিনই রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের পাল্টা সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সংবিধান সম্মত নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে যারা এই নির্বাচন ইস্যুতে তৎপর তাদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনে বাধা দিতে এলে তা প্রতিহত করা হবে।
সমাবেশে এই ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দফা একটা, শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচন শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই হবে, শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দেবেন। আমরা কাউকে আক্রমণ করতে যাবো না। ঢাকায় বিদেশি বন্ধুরা এসেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা চান সুষ্ঠু, অবাধ, ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন, আমাদেরও লক্ষ্য ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন। কিন্তু এই ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশনকে যারা বাধা দিতে আসবে আমরা তাদের প্রতিহত করবো। আমাদের এক দফা সংবিধান সম্মত নির্বাচন।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ওই সমাবেশ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগ এই অবস্থানই অব্যাহত রাখবে। সংবিধানে বলা আছে, যে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকবে সেই সরকারই নির্বাচনে সময় দায়িত্ব পালন করবে। এর বাইরে আওয়ামী লীগ যাবে না। শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনার সরকারই থাকবে। এটা মেনে নিয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। আর বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচন হবে এবং নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন কারার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল অনড় অবস্থানেই থাকবেন।
ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, সরকারের পদত্যাগের কথা বলা হলেও শেষ মূহুর্তে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। অতীতে দলটি নিবাচন বর্জন করেছে ও প্রতিহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এবারও সেটা করতে গেলে ব্যর্থ হবে এবং তাতে রাজনৈতিকভাবে তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশিদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য চাপ সৃষ্টির যে চেষ্টা বিএনপি করেছিলো, সেটা সফল হয়নি। তাছাড়া বিএনপি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকমীরাও ইতোমধ্যেই নিবাচনমুখী হয়ে উঠেছে। এসব বুঝেই বিএনপি নির্বাচনে আসতে বাধ্য হবে বলেও আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মনে করি, বিএনপি শেষ মূহুর্তে নির্বাচনে আসবে। তারা বিদেশিদের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ধর্ণা দিয়েছিলো কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। তাদের দলের কর্মীরাও নির্বাচনমুখী। সব মিলিয়ে আমি মনে করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।
বিএনপি অতীতে নির্বাচন বর্জন করেছে, এবারও নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতীতে তারা বর্জন করেছিলো বলেই এবার নির্বাচনে আসবে, অতীত অভিজ্ঞাতা থেকেই নির্বাচনে তাদের আসতে হবে। আর যদি না আসে, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে, সংবিধানে যেটা বলা আছে সেটাই হবে, এটাই আমাদের অবস্থান।
এদিকে এক দফা দাবির ফলে সংকট কাটিয়ে উঠতে সংলাপের পথও বলতে গেলে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী এই সরকারের পদত্যগাই এক মাত্র সমাধান। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনঢ়। তাছাড়া আওয়ামী লীগ আগে থেকেই বলে আসছিল সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এটা মেনে নিলে অন্য কোনো বিষয় থাকলে তা নিয়ে সংলাপ হতে পারে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন বিএনপিকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু বিএনপির এক দফা ঘোষণা পর সেটির সম্ভাবনাও এখন আর থাকছে না। তাছাড়া ১২ জুলাইয়ের সমাবেশে আওয়ামী লীগও সংলাপের সম্ভাবনা নাকোচ করে দিয়েছে।
সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পদাক ওবায়দুল কাদের বলেন, যাদের হাতে রক্তের দাগ তাদের সঙ্গে আপস নয়। যাদের হাতে রক্তের দাগ তাদের সঙ্গে ডায়লগ নয়, কোনো সংলাপ নয়। যারা আমাদের চার নেতা, তার আগে ১৫ আগস্ট সব খুনের রক্তে যাদের হাত রঞ্জিত তাদের সঙ্গে আমরা আপস করতে পারি না।
আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সমস্য সমাধানের কোনো সুযোগ বা সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ তো থাকেই। কিন্তু এই মূহুর্তে আমি বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। সম্প্রতি ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। সেখানে তারা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দিয়েছে। এখানে সংলাপ হয় কী করে। নিবাচন হবে সংবিধান মেনে। এটায় সম্মত না হলে তো সংলাপ হতে পারে না। আমি মনে করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। কারণ বিদেশিদের মাধ্যমে তারা যেটি করতে চেয়েছিলো সেটি সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এসকে