ঢাকা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরে সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নারী নেতৃত্ব যেমন এসেছে, তেমনি অভিযোগ উঠেছে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে মূল কমিটির ৩০১ জনের মধ্যে প্রায় ২৫০ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেও অন্য ইউনিটের সিনিয়র নেতাদের অগুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।
তবে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজের কাছে দাবি করেছেন, এ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২২৬ জন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল কলেজ থেকে মাত্র ১ জন করে পদ পেয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ থেকে পদ পেয়েছেন ৬ জন করে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে কেউ পদ পায়নি।
ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিটের সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত রূপ। অন্য ইউনিটের যোগ্যদের স্থান দেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হওয়া সত্ত্বেও আমার ক্যাম্পাস থেকে এক সিনিয়র নেতাকে ছোট পদ দেওয়া হয়েছে।
গত ১২ বছর ধরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে রাজনীতি করে বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয় বলে নিম্নসারির পদ পাওয়া এক নেতা বলেছেন, প্রতিবারই ছাত্রলীগের কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্য থাকে। কিন্তু এবারের কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য ইউনিটের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নও করা হয়নি। যেটা বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন চিন্তা ও আদর্শের বিরোধী।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, যারা যোগ্য তাদের পদ দিয়েছি। কে কোন প্রতিষ্ঠানের সেটা দেখা হয়নি। চেষ্টা করেছি সারা দেশ থেকেই পদ দিতে।
ছাত্রলীগের কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন আমিরুজ্জামান পিয়াস। যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী থাকলেও কেন এ পদে ঢাবি শিক্ষার্থী এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম বলেন, এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ পদ পেয়েছেন।
ছাত্রলীগের কমিটিতে নারী নেতৃত্বের জোয়ার
প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের কমিটিতে নারী নেতৃত্বের জয়জয়কার দেখা গিয়েছে। বিগত কমিটিগুলো ১-২ জন নারী নেত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও বাকি কয়েকজনকে অগুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা গেলেও এবার পদ পেয়েছেন প্রায় ৪০ জন।
এর মধ্যে সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন ৫ জন—রাজিয়া সুলতানা কথা, কোহিনূর আক্তার রাখি, খাদিজা জাহান উর্মী, তামান্না জেসমিন রিভা ও রনক জাহান রাইন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ১১টি পদে কোনো নারী না থাকলেও ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন আতিকা বিনতে হোসাইন।
এদিকে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ৪ সম্পাদকীয় পদে এসেছে নারী নেতৃত্ব। তারা হলেন—সাংস্কৃতিক সম্পাদক জান্নাতুল হাওয়া আঁখি, পাঠাগার সম্পাদক সানজিনা ইয়াসমীন, ছাত্রী ও নারী উন্নয়ন সম্পাদক নোশিন শর্মিলী, এসডিজি সম্পাদক রাইসা নাসের।
এছাড়াও বিভিন্ন উপ-সম্পাদক, সহ-সম্পাদক ও সদস্য পদে এসেছেন একাধিক নারী নেতৃত্ব।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে নারীদের নেতৃত্বে নিয়ে এসেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৩
এনবি/এমজেএফ