ঢাকা: বিএনপি মানুষের ওপর হামলা না চালালে মুখোমুখি অবস্থানে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (১৭ জুলাই) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন- আগামীকাল মঙ্গলবার বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচি রয়েছে। এদিন আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচি রয়েছে। মুখোমুখি অবস্থানে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে কিনা? জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কয়দিন আগে দুই দলই দেড় কিলোমিটার দূরত্বে সমাবেশ করেছে। কিছুই হয়নি সেটি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। যদি না বিএনপি মানুষের ওপর হামলা না চালায়।
বিএনপি বলেছিল শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করবে, হরতাল দেবে না। কিন্তু রোববার মির্জা ফখরুল বলেছেন, সরকারের সব দপ্তর তারা দখল করবেন এবং রাজপথেই ফয়সালা হবে। এ ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে, দেখা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যখন বৈঠক করেন তখন তিনি স্পষ্ট তাদের বলেছেন, হরতাল-অবরোধ গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। বিএনপির তাদের যদি বোধশক্তি থাকে তাহলে তারা কোনো বিধ্বংসী কর্মসূচির দিকে যাবে না। আর যদি জনগণের কষ্ট সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচিতে তারা যান তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা হবে।
ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে এনজিও ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এরা নাগরিক সমাজের খণ্ডিত অংশ। তারা পুরো নাগরিক সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে না। নাগরিক সমাজ বা সুশীল সমাজ তারা অনেক বড়। যারা সব সময় সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত তারা দেন দরবার করে তাদের সাথে দেখা করেছে। তারা এ কথাগুলো হর-হামেশাই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে, টক-শোতে বা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বলে আসছে। একই কথাগুলো সেখানেও বলেছে। তারা যেহেতু পুরো নাগরিক সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে না তাই তাদের বক্তব্য দেশের নাগরিক সমাজের বক্তব্য নয়।
ইইউ ও মার্কিন প্রতিনিধি দল সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। কোনো কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে তারা কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তাদের সাথে আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। কোনো পর্যায়ের বৈঠকে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু কিংবা নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সংবিধানের আলোকে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো প্রমাণ করে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সরকারি দলের তোয়াক্কা করে না।
তিনি বলেন, সরকারি দলের তোয়াক্কা যদি করত এবং সরকারকে সমীহ করত তাহলে গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচনটা বাতিল করত না। সেটি সরকারি দল হিসেবে আমরা অপোজ করেছি। আমরা বলেছি যেটি করেছে এটি আইন বহির্ভূত। কিন্তু তারা পুরো নির্বাচন বাতিল করেছে। এবং সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচন হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। শুধুমাত্র একজন প্রার্থীকে একজন ঘুষি মেরেছে, সেটি উচিত হয়নি কিন্তু সেটিকেই বড় করে দেখানো হয়েছে।
ঢাকা-১৭ আসনে সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দেশে যেখানে উপনির্বাচন হয়, সেখানে ভোটার টার্ন-আউট কম হয়। এটা আমাদের দেশেও সবসময় হয়ে আসছে। নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে উপনির্বাচন হলে ভোটার টার্ন-আউট খুবই কম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
শক্তিশালী প্রার্থী আসছে না কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে। বিএনপি মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিল ভোট না দিতে। এরপরেও কোনো কোনো জায়গায় ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। সুতরাং বিএনপি না আসলেই যে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না, সেটি যে সঠিক নয় তা প্রমাণ হয়েছে। অবশ্যই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে নির্বাচন বা গণতন্ত্র অনেক শক্তিশালী হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
জিসিজি/এমজে