ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। একই দাবিতে সমাবেশ থেকে শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকা শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। দুপুর দুইটার দিকে সমাবেশ শুরু হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, তাকে আজ অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। আর তার সন্তান তারেক রহমান দেশে ভূলণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারে না। জিনিসপত্রের দামের কারণে মানুষের জীবন আজ অনিষ্ট হয়ে গেছে। আজ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতে নাকি আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ বিদ্যুৎ নেই। কিছুদিন পরপরই বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীরা কষ্ট করে দেশে পাঠান। আর সরকার তাদের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে। এরা লুটেরা সরকার। এরা অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পঙ্গু করে দিয়েছে। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে। ঢাকা ১৭ আসনে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণ জানে এ সরকার ভোট চোর সরকার। তাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাভ নেই।
ফখরুল বলেন, আজকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য আমরা ৩২ দল একসঙ্গে আন্দোলন করছি। এর বাইরেও যারা আছে, তারাও বলেছে এদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। আমরা আন্দোলন শরিক সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। যে বিচার ব্যবস্থা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত, তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এ সরকার বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারও যেনতেন নির্বাচন করতে চায়। আজ সরকারের অপকর্মের জন্য র্যাবসহ অনেকের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া হয়েছে। যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
তিনি আটক হওয়া নেতাদের মুক্তি দাবি করে বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা অবৈধ সরকারের বেআইনি আদেশে কাজ করবেন না। আইনের শাসন মেনে চলুন। অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম ও উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নুল আবদীন ফারুক, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম, আলতাফ চৌধুরী, উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সাদেক খান প্রমুখ।
মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৃহস্পতিবার থেকে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসেন। সকাল নয়টার মধ্যে পুরো নয়াপল্টনে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। দুপুরে এর পরিধি আরামবাগ, ফকিরাপুল, কাকরাইল, শান্তিনগর, দৈনিক বাংলা এবং পল্টন মোড় পর্যন্ত চলে যায়। সমাবেশ চলাকালে দুই দফা বৃষ্টি নামলেও অব্যাহত থাকে সমাবেশ। বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা সমাবেশে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মুখরিত করে রাখেন পুরো এলাকা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত দশটায় শুরু হয় মঞ্চ নির্মাণ কাজ। নয়টি ট্রাক দিয়ে করা হয় মহাসমাবেশের ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ। আশেপাশে লাগানো হয় দেড় শতাধিক মাইক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুলাই, ২৮, ২০২৩
টিএ/আরএইচ