ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করতে সরকার এ রায় দিয়েছে: মির্জা ফখরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৩
জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করতে সরকার এ রায় দিয়েছে: মির্জা ফখরুল

ঢাকা: জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের মামলার রায় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালে তথাকথিত জরুরি সরকার প্রতিপক্ষ দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট মামলা দায়ের করে।

কারণ তথাকথিত জরুরি সরকার ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আন্দোলনের ফসল। এ জরুরি সরকারের সময় আওয়ামী লীগ প্রধানের নামে ১৫টি মামলা করা হলেও ক্ষমতা দখলের পর আনুগত্য বিচারপতি দিয়ে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেন শেখ হাসিনা। কোনো মামলায় তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি।

বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিচার বিভাগের দলীয়করণের একটা নজির হচ্ছে তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের মামলার রায় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে সরানোর পাঁয়তারায় সরকার তড়িঘড়ি করে এ মামলার রায় দিয়েছে। দেশে বহু মামলা আছে যা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের মামলার রায়ের মাধ্যমে সরকার আবারও প্রমাণ করেছে বিচার বিভাগ দলীয় করণের পেছনে আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রম ঘটনা বলে মনে করা হয় না।  

তিনি বলেন, সরকার তারেক রহমান ও তার স্ত্রীকে সাজা দেবে এটাতে আমাদের কোনো সংশয় ছিল না। আমরা এর আগে অনেকবার গণমাধ্যমে এটা বলেছি। আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধীদল নেতাদের দমন করতে যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে বোঝা যায় সরকার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চায় না। সরকার প্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চায়।

এ ‘ফরমায়েশি’ রায়ের মাধ্যমে সরকার ধারাবাহিকভাবে দেশকে গণতন্ত্র হীন করার চক্রান্ত চালাচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানসহ বিএনপির সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র নব্য বাকশাল কায়েমের লক্ষ্যে। আইন আদালতকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এক দমন যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার হচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে। যেসব বিচারক তারেক রহমানকে মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন তাদের মধ্যে বিচারক মোতাহার হোসেন দেশে থাকতে পারেননি। পাশাপাশি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে গান পয়েন্টে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এ রায় শেখ হাসিনার  ‘ফরমায়েশে’ হয়েছে তার প্রমাণ হচ্ছ, আদালতে প্রায় ৫০ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোর গতিতে চলেছে এ মামলার কার্যক্রম। এক মাসের জন্যই মামলায় প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী নিজেরা বিতর্ক স্থাপন করেছে। আমাদের পক্ষে আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ ও সরকার দলীয় আইনজীবীরা বিভিন্ন সময় হামলা চালায়। এক দফা আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে সরকারি মামলার রায় দিয়েছে যেমনটা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সরকার দিয়েছিল।

তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় রামদা ও লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা করে তা মানুষের হাতে হাতে মোবাইলের ভিডিওতে দৃশ্য মান হয়েছে। কিন্তু এসবের মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অনেক মৃত এবং বিদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। যারা এসব ঘটনার সময় দেশেই ছিল না। সরকার নিয়ন্ত্রিত আদালতের মাধ্যমে তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায়ের ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ।

এর আগে, বুধবার ঢাকার নিম্ন আদালতে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুটি অভিযোগে নয় বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২৩
ইএসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।