ঢাকা: শেখ হাসিনার পদত্যাগই যখন বিএনপি-জামায়াত ও তাদের রাজনৈতিক অংশীদারদের একমাত্র দাবি, তাহলে সংলাপ কেন, এমন প্রশ্ন করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি এবং সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডের বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগই যখন বিএনপি-জামায়াত ও তাদের রাজনৈতিক অংশীদারদের একমাত্র দাবি- তাহলে সংলাপ কেন? ‘বিচার মানি কিন্তু তাল গাছটা আমার’এ রাজনৈতিক অবস্থানে থেকে সংলাপের কথাও ষড়যন্ত্রমূলক। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের রাজনৈতিক অংশীদারদের আসল চাওয়া নির্বাচন নয়, তারা জল ঘোলা করে দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বিএনপি-জামায়াতের ছদ্মবেশী সরকার আনতে চাইছে।
জাসদ সভাপতি বলেন, সামরিক সরকার, অসাংবিধানিক সরকার দেশের ক্ষতি করা ছাড়া ভালো কিছু করতে পারে না, তা অতীতে বারবার প্রমাণ হয়েছে। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। যারা নির্বাচন বাঁধাগ্রস্ত করার অসাংবিধানিক অগণতান্ত্রিক রাজনীতি করবে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে সাহায্য করা দেশের সব গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক শক্তির জাতীয় কর্তব্য।
তিনি আরও বলেন, যারা অতীতে স্বাভাবিক-গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক রাজনীতির পথ পরিত্যাগ করে অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক-অস্বাভাবিক রাজনীতির পথে গিয়েছিলো, যারা আগুন সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতা-অন্তর্ঘাতকে রাজনীতির কৌশল হিসেবে নিয়েছিল তাদের উচিত তওবা করে, জনগণের কাছে মাফ চেয়ে স্বাভাবিক-গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক রাজনীতিতে ফিরে আসা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।
হাসানুল হক ইনু বিএনপির উদ্দেশে বলেন, বিদেশি শক্তির গায়েবি হস্তক্ষেপের আশায় দিনের পর দিন পার করলেও কোনো লাভ হবে না, সে আশায় গুড়ে বালি হবে। স্বাভাবিক রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা। নির্বাচন যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, নির্বাচন ততই ভালো ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে বাজার সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের বাজারকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
বাজার সিন্ডিকেটকে কঠোর হস্তে দমন করে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
একই সঙ্গে হাসানুল হক ইনু ফিলিস্তিনের গাজায় নারী-শিশুসহ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের বর্বর হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জনান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সভাপতি হাজী ইদ্রিস বেপারীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহিবুর রহমান মিহিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সমন্বয়ক ও জাসদের সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার।
সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা মহানগর উত্তর জাসদের সভাপতি ও জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চুন্নু, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি ও জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুন্নবী, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন ও জাসদ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী।
সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মো. ইদ্রিস বেপারীকে সভাপতি ও সোহেল আহম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
আরকেআর/জেএইচ