ঢাকা: সবাইকে চোখ কান খোলা রাখার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারেন তাহলে এমনিভাবে উন্নয়নের শিখড়ে পৌঁছাবে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজারে (কৃষি মার্কেট) সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ ও পুনঃনির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, কী জন্য ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা হলো? কী কারণে জাস্টিজ কোয়ার্টারে হামলা হলো? পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে, সেই হত্যা নিশ্চিত করার জন্য ছ্যানা দিয়ে কুপিয়ে দুই ভাগ করে দেওয়া হলো। শত শত পুলিশকে নির্মমভাবে আহত করা হলো? আমার নেত্রী যখন আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেলাম, সেখানে না গেলে আমি এই বীভৎসতা বিশ্বাস করতাম না।
বিএনপির অবরোধ কার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করে নানক বলেন, এই অবরোধ জনগণের বিরুদ্ধে। আর তারেক রহমান সাহেব লন্ডনে বসে লাদেনের মতো বক্তব্য আর নির্দেশ দেন। তার লক্ষ্য হলো, যে দেশে তিনি থাকতে পারেন না, সেই দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না। যেই দেশে তিনি থাকতে পারেন না, সেই দেশকে তিনি স্থিতিশীল থাকতে দেবেন না।
তিনি বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে এই (কৃষি মার্কেট) মার্কেটে আকস্মিকভাবে আগুন লাগে। সমস্ত মার্কেটটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) জীবনে নেমে আসে এক অনিশ্চয়তা। এই দোকান মালিকদের জীবনে যেমন অনিশ্চয়তা আসে, তেমনি মালিকরা যাদের দোকান ভাড়া দিয়েছেন, সেসব ব্যবসায়ীদের জীবনেও অনিশ্চয়তা নেমে আসে। যারা এসব দোকানে কাজ করতেন তাদের জীবনে নেমে আসে এক দুর্বিসহ পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতে আমরা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করিনি। আমরা আমাদের দায়িত্ব জানি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের সেবা করেন। মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করেন। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন, ফজরের নামাজ আদায় করেন। মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি দিন রাত পরিশ্রম করেন। সেই মানুষটির কর্মী হিসেবে আমরা দায়িত্ব পালন করতে ভুল করিনি। আর ভুল করিনি বলেই মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে আমরা মার্কেটটি পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।
জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, আমাদের চরিত্র এমন, আমরা এই মার্কেটে খুঁজতে যাইনি, জরিপ করিনি কে আওয়ামী লীগ করতেন, কে বিএনপি করতেন, কে জামায়াত করতেন, কে জাতীয় পার্টি করতেন। আমরা এই মোহাম্মদপুরে যে উন্নয়ন করেছি, যে রাস্তা করেছি, সেই রাস্তা দিয়ে সব দলের নেতাকর্মী চলাচল করে। এই মোহাম্মদপুরে পানির জন্য হাহাকার ছিল। আমরা পানির পাম্প স্থাপন করেছি। এই মোহাম্মদপুরে বিএনপি-জামায়াতের আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তারা লুটপাট করে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছি।
তিনি বলেন, এই মোহাম্মদপুর ছিল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য, মাদকের স্বর্গরাজ্য। আমরা সেই মাদকের স্বর্গরাজ্যের কবর রচনা করেছি। যদিও এখন আবার মাথা উঁকিঝুঁকি মারে। এই মোহাম্মদপুরের রাস্তা দিয়ে যাওয়া যেত না। বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি থাকতো। গাড্ডায় পড়ে রিকশা উল্টে যেত। সেই রাস্তাঘাট আমরা করে দিয়েছি। যে বসিলার মানুষ মোহাম্মদপুর যাওয়ার সময় বলত, ঢাকা যাচ্ছি। সেই বসিলা এখন তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হয়েছে। আমরা যা বলি, তা করি। আমাদের নেত্রী যা বলেন, তা করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সলিমউল্লাহ্ সলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ১৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ সাদেক খান ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, ডিএনসিসির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরিক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহীনা আক্তার সাথী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কৃষি মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেওয়া হয় এবং কৃষি মার্কেটে পুনরায় মার্কেট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ