ময়মনসিংহ: প্রয়াত ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে উচ্ছ্বসিত বিভাগীয় নগরের এই আসনের নৌকার সমর্থকেরা।
উৎফুল্ল নেতাকর্মীদের ভিড়ে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজার রহমানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোহিত উর রহমান শান্ত।
এ সময় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, শান্তর চাচা প্রবীণ সাংবাদিক নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলামসহ ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শান্ত মনোনয়ন জমা দিতে আসার খবর পেয়ে এদিন দুপুরের পর থেকেই শত শত নেতাকর্মী জড়ো হয় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে। এ সময় তারা বিগত টানা ১৫ বছর পর বিভাগীয় নগরের এই আসনে শান্তকে নৌকার মাঝি করায় জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় ‘ডামি প্রার্থী’ বা স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা যুবলীগের অন্যতম সদস্য এবিএম আকতারুজ্জামান রবিন বলেন, প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের ছেলে মনোনয়ন পেয়েছে, এর চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত আর কি হতে পারে? আর এ কারণেই দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষও উচ্ছ্বাসিত।
এ সময় পাশে দাঁড়ানো আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এগিয়ে এসে রাজনীতিতে শান্ত পরিবারের অবদান ও অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবার হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন শান্ত। এরপর শহর শাখা ছাত্রলীগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক, শহর ছাত্রলীগ ও আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর এসব কারণেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার অভিযোগে বাবা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সঙ্গে ছেলে শান্তও গ্রেপ্তার হয়ে টানা দেড় মাস কারাভোগ করেন। এছাড়াও বিএনপি শাসনামলে আরও একবার গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ দিন কারাভোগ করেন শান্ত।
একই আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমসহ আরও অনেকেই। তবে শেষতক জননেত্রী শেখ হাসিনা শান্তকে নৌকার মাঝি করায় নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এহতেশামুল আলমসহ অন্যরাও।
জানতে চাইলে এহতেশামুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও জননেত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা সবাই এক। ঐক্যবদ্ধভাবেই সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করছে। এতে এই আসনে নৌকার বিজয় ইনশাল্লাহ নিশ্চিত বলেই আশা করছি।
তবে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও নৌকার মাঝি মোহিত উর রহমান শান্তর কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অনেকেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত সঠিক পরে জানানো হবে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনে মোহিত উর রহমান শান্ত ছাড়াও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির আবু মূসা সরকার, জাসদের অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন খান দুলুসহ ন্যাপ ও আরো কয়েকজন প্রার্থী।
অপরদিকে এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শেষতক মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় শান্তর বিপরীতে মাঠে আর কোনো শক্তিমান প্রার্থী নেই বলে মনে করছে নৌকার সমর্থকরা।
এই অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় নির্বাচনী আলোচনায় নতুন করে গুঞ্জন সৃষ্টি করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। তবে সংস্কারপন্থি হিসেবে দল থেকে ছিটকে পড়ায় প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র নেই। যদিও সাধারণ মানুষের মাঝে তাকে নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। ফলে ভোটের মাঠে তিনি কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবেন তা নিয়ে জনমনেও রয়েছে নানা সংশয়।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মোট ভোটার ৬ লাখ ৫০ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ৭৯৭ জন এবং নারী ভোটার ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৭ জন। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১০ জন।
এই আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৭টি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা অপরাটের আবু নাঈম।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২৩
এসএএইচ