নরসিংদী: ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জায়গা পাবে না’ বলে হুমকি দেওয়া সেই আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শো-কজ) দেওয়া হয়েছে। এ বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে ওই নোটিশে।
নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরীন বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে এ নোটিশ দেন। সিরাজুল ইসলাম মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। নোটিশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাকে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে এ মতবিনিময় সভায় ওই আওয়ামী লীগ নেতা এ হুমকি দেন। পরে রাতেই তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
নরসিংদী-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে হিরু। তিনি ছাড়াও এ আসনে আরও ৮ প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে আছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার মাধবদী পৌর পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান।
মাধবদীর পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন প্রধানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নরসিংদী পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন, মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই বক্তব্যে সিরাজুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘মাধবদীর মেয়র মোশারফ সাহেব বক্তব্য দেওয়ার পরই পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গণজাগরণ তৈরি হবে ইনশা আল্লাহ। এ গণজাগরণে কেউ বাধা দিতে পারবেন না। আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। কাল থেকে নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না। ’ এ বক্তব্য শুনে উপস্থিত লোকজন হাসাহাসি শুরু করলে তিনি নিজের বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, ‘হিরুর নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না। ’
এ বিষয়ে জানতে সিরাজুল ইসলাম বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে আমি কোনো বক্তব্য দিতে চাইনি। সেখানে আমরা যারা ছিলাম, সবাই আওয়ামী লীগ করি। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলকে সমর্থন করে আমি ওই বক্তব্যে বলেছি, এমপি হিরুর লোক পালানোর জায়গা পাবে না।
এ মন্তব্যের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সিরাজুল ইসলামের ওই বক্তব্য আমি শুনেছি। তার এ বক্তব্য নৌকার বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অচিরেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহ আগে (২৯ নভেম্বর) এ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের এক মতবিনিময় সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম ওরফে রিমন।
তিনি বলেন, ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না। ’ পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে তার বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক। পরদিন শুক্রবার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দুই দফায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় ছয় দিন ধরে তিনি নরসিংদী কারাগারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
জেএইচ