ঢাকা: আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সর্বাত্মক শ্রমিক ধর্মঘটে হবে বলে জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অতীতে যত বড় আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে- সেই আন্দোলনের ভেন্ডর ছিল ছাত্ররা, তারপর ছিল শ্রমিকরা।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ‘নির্বাসিত গণতন্ত্র ও বিপন্ন মানবাধিকার’ শীর্ষ আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে মান্না এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এ সভার আয়োজন করে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, এ দেশে যারা বিরোধী দলের নেতা হতে চায়, বিরোধী দল গঠন করতে চায়, তারা পোস্টার ছাপায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হয়ে। এটা তো কোনো ভোট নয়। মানুষ ভোট দিতে যাবে কেন? কিন্তু সূর্য উঠবে, সূর্য ডুববে, ৭ জানুয়ারিও আসবে। ওইদিন সকালবেলা ওরা (আওয়ামী লীগ) সব মঞ্চ সাজিয়ে রাখবে। ঘরে ঘরে কিছু পোস্টার, ব্যালট পেপার থাকবে। আর বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় লাইন থাকবে। ওদেরকে দুইবার করে নাস্তা খাওয়াবে, তিনবার করে লাঞ্চ করাবে, টাকাও পকেটে গুঁজে দিবে, আর বলবে, থাক সবসময় ওই জায়গায় (ভোটকেন্দ্রে)। যখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে, তখন টেলিভিশনে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এটা আটকানো যাবে না। ওরা (আওয়ামী লীগ) ঘরে বসে যখন নমিনেশন পেপার বিতরণ করে, এটা ঠেকাবেন কি করে?
এই নির্বাচনকে ফালতু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো নির্বাচনই নয়৷ এটা এখন দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন জুলুম-অত্যাচারগুলো করতেই থাকবে। এজন্য আমরা এই সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে লড়াই ঘোষণা করেছি।
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, দেশের ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি মানুষের এই সরকারকে চায় না। এটা বোঝা গেছে৷ কিন্তু পুরো প্রশাসন এখনও তাদের সঙ্গে আছে৷ তাই এখনও কান টেনে, ঘাড় ধরে, গলায় গামছা বেধে ওদেরকে (সরকার) নামিয়ে দিতে পারছেন না হয়তো। কিন্তু ওদের তো নামতে হবে। সেই লড়াইটাই করতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানকে শিল্পকলার সঙ্গে তুলনা করে তিনি আরও বলেন, নারী যেমন সেলাই করে নকশি কাঁথা বানায়। গণঅভ্যুত্থান তেমন শিল্প। আপনারা যখন অভ্যুত্থান শুরু করবেন, সরকারের দুর্বল জায়গায় আঘাত শুরু করবেন, তখন আঘাত করতেই থাকবেন। আঘাত করতে করতে যেন সরকারের পতন হয়। নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন, দখলদার সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। সে তার ইচ্ছা মতো আইনের কান মোচড়ায়, বিচার ব্যবস্থার পা কেটে ফেলে, হাত কেটে ফেলে এবং নিজেদের যা ইচ্ছে হয় তারা সেগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে।
ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল আজিজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূর।
এর আগে ঢাকা রির্পোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক এ এ এম ফয়েজ হোসেন আগামী ১ জানুয়ারি থেকে গার্মেন্টস সেক্টরে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেন।
মজুরি আন্দোলনে নিহতদের হত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি চাকরিচ্যুতদের পুর্ণবহাল, গার্মেন্টস সেক্টরে ঘোষিত মজুরি বাতিল করে নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার নির্ধারণের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এসএসপি।
এ সময় এ এ এম ফয়েজ বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হবে৷ যতদিন দাবি পূরণ হবে না, ততদিন কারখানা বন্ধ থাকবে। আগামীকাল রোববার (২৪ ডিসেম্বর) থেকে সব সেক্টরে গণসংযোগ চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩
এসসি/এমজে