ঢাকা: সারাদেশে হতে যাওয়া একটি তামাশার নির্বাচন বর্জন করেছি, কিন্তু সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন বর্জন করিনি এমন মন্তব্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা জানি আজকের পরিবেশ পরিস্থিতি অত্যন্ত দুরুহ। আজকে আমরা সরকারের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মঈন খান বলেন, আমি সরকারকে অনুরোধ করব, ৭ তারিখ এসে গিয়েছে। খুব বেশি দূরে নয়। আপনারা যেভাবে বানরের পিঠা বেচার নির্বাচন আয়োজন করেছেন, নির্বাচনের আগেই সব সিটের ফলাফল এরই মধ্যে নির্ধারণ করে ফেলেছেন। এখনও সময় আছে এ অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন এতে করে বিএনপি সুনাম হবে না। সুনাম আওয়ামী লীগেরই হবে।
বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না এমন মন্তব্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমি অত্যন্ত আহত হৃদয় নিয়ে এখানে এসেছি। আমি বিএনপি সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ সাংবাদিককে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিক বিভজন থাকতে পারে। তবে সেটা আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ, বিএনপির বাংলাদেশ এটা আমি বিশ্বাস করি না। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আজকে আওয়ামী লীগ সরকার এই বিভাজন তৈরি করেছে। এ সরকার তাদের ক্ষমতা দীর্ঘ করার জন্য বা চিরস্থায়ী করার জন্য জাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছু হতে পারে না।
আওয়ামী লীগকে সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মঈন খান বলেন, এখনো সময় আছে, ৭ তারিখ অনেক দূরে। কথায় আছে, দিল্লি হনুজ দূর অস্ত। আপনারা ভাবুন, আলোচনায় বসুন, চিন্তা করুন, সংলাপ করুন। হিংসাত্মক সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসনু।
আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে জানিয়ে মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে বলেই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিচ্ছে না। যে যত কথাই বলুক না কেন, মূল কারণ তো এটাই। ভয় পাওয়ার তো কোন কারণ নাই। আপনারা এ নির্বাচন সুষ্ঠু করে দিন। এমনও হতে পারে বাংলাদেশের মানুষ খুশি হয়ে আবার আপনাদেরই ভোট দেবে। বাংলাদেশের মানুষের যে চরিত্র এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা সেটা উপলব্ধি করে আপনারা রাজনীতি করুন।
বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে আওয়ামী লীগকে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মঈন খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হিংসা সংঘাত এবং সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে আমরা যেন বেরিয়ে আসতে পারি আপনারা সে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে আপনারা সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
পৃথিবীর প্রায় সব সরকার সংবাদপত্রকে ভয় পায় কিন্তু সেখানে আজকে সরকার সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরে আছে এমন মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, 'টেলিভিশন মিডিয়া বলেন আর সোশ্যাল মিডিয়া বলেন তাদের একটি গুরু দায়িত্ব হচ্ছে, যারা দেশ পরিচালনা করে তাদেরকে জবাবদিহিতা করতে হবে। জবাবদিহিতা করতে হবে জনগণের সামনে। এজন্যই পৃথিবীর প্রায় সব সরকার সংবাদপত্রকে ভয় পায়। মিডিয়ার হাতে বন্দুক নেই, টিয়ার গ্যাস নেই, সাউন্ড গ্রেনেড নেই। কিন্তু তাদের হাতে যে জিনিসটি আছে, সেটি হচ্ছে কলম। আজকে আধুনিক বিশ্বে একটি দেশের সরকার যত শক্তিশালী হোক সেটাকে কিন্তু মিডিয়া ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। এটার জন্য বন্দুকের দরকার হয় না।
বিএনপির এ নেতা বলেন, যেখানে ১৭৭১ সালে সংবাদপত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ভূমিকা ব্রিটিশ সরকার নিশ্চিত করেছিল। সেখানে আজকে সরকার সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরে আছে। তাদেরকে এই সরকার বলছে, তোমরা কথা বলতে পারবে না। ১৭৭১ সাল থেকে আজকে আড়াইশো বছর পেরিয়েছে, তাহলে সেখানে আজকের সরকার কি মানব সভ্যতার পেছনের দিকে হাঁটছে?
বিএফইউজ এর নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে মঈন খান বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন আজকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পেরেছে এজন্য তারা প্রশংসা পাবে। আজকে আমরা সরকারের চোখে এটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই। এই চরম পরিস্থিতির মধ্যে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
ইএসএস/ এসসি/জেএইচ