সিরাজগঞ্জ: ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট বেলকুচি পৌর আওয়ামী লীগের ৫৬ জন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির ৬৫ জনই কাজ করছেন নৌকার বিরুদ্ধে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সাবেক কমিটির বেশিরভাগ নেতাই ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
ঈগলে ভোট চাইছেন নৌকা নিয়ে নির্বাচিত ৪ ইউপি চেয়ারম্যান, বর্তমান পৌর মেয়র, সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ তৃণমূলের একাধিক নেতা।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে (বেলকুচি চৌহালী) শিল্পপতি আব্দুল মমিন মন্ডলের নৌকা ডোবাতে এভাবেই ঈগল পাখিতে একাট্টা হয়েছে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ।
নেতৃবৃন্দের দাবি শিল্পপতি মমিন মণ্ডল এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়নে নজর দিতে পারেননি এবং সাংগঠনিকভাবে দলকে বিপর্যস্ত করেছেন। এ কারণেই তারা প্রবীণ নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের পক্ষে কাজ করছেন।
তবে বেলকুচিতে স্বতন্ত্র নির্বাচিত দুই ইউপি চেয়ারম্যান, কয়েকটি ইউনিয়ন সভাপতি-সম্পাদক ও এনায়েতপুর থানা শাখার সভাপতি-সম্পাদক নৌকার পক্ষেই কাজ করছেন। তাদের দাবি সুবিধাবাদীরা বিরুদ্ধে গেলেও এখানে নৌকাই বিজয়ী হবে।
সিরাজগঞ্জ-৫ নির্বাচনী এলাকার বেলকুচি পৌর এলাকা ও ভাঙ্গাবাড়ী, রাজাপুর, ধুকুরিয়া বেড়া, দৌলতপুর এবং সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে আসে।
সগুনা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান গোলাম আম্বিয়া আকন্দ, ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মিলন, জোকনালা গ্রামের নুরুল ইসলাম, সগুনার প্রদিপ সেন, গোপালপুরের মুছা সরকারসহ তৃণমূল কর্মীরা বলেন, গত ১০ বছরে বেলকুচিতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এমপি এলাকাতেও খুব একটা আসেন না। জনগণের নেতা লতিফ বিশ্বাস। তিনি সবসময় দলের নেতাকর্মীদের পাশে থাকেন। এ জন্যই আমরা তার পক্ষে কাজ করছি।
ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া কমিটির সবাই ঈগল পাখির পক্ষে কাজ করছেন।
রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ ও বেলকুচি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সোলায়মান বলেন, বেলকুচির ৬ ইউনিয়নেই নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিলেন এমপি। এর মধ্যে আমরা ৪ জন বিজয়ী হই। চারজনই এবার লতিফ বিশ্বাসের কাজ করছি। দুই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নৌকার পক্ষে কাজ করছে।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শরীফ মির্জা বলেন, কমিটির ৬৯ সদস্যের ৫৬ জনই ঈগল মার্কার কাজ করছে। ১০ বছরে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে বেলকুচির উন্নয়নের মিল নেই। বর্ষীয়ান নেতা লতিফ বিশ্বাসের দ্বারা বেলকুচির উন্নয়ন ঘটবে। তার পক্ষে আমরা কাজ করছি।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোপাল প্রামানিক ও সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ বলেন, সংগঠনের ৭৫ সদস্যের ৬৫ জনই ঈগলের কাজ করছে। কারণ লতিফ বিশ্বাস দলকে সুসংগঠিত করেছেন আর মমিন মন্ডল হাইব্রিডকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান মাখন বলেন, বেলকুচি ও চৌহালীর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূলের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে।
সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল বলেন, আমি নিজেও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। এখানে তৃণমূল আওয়ামী লীগসহ সকল জনপ্রতিনিধি ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়নের জন্য যাকে দরকার তাকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেন, এমপির অযাচিত হস্তক্ষেপে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত, নেই কোনো কমিটি। ২০২২ সালের কাউন্সিলে অগঠনতান্ত্রিকভাবে মমিন মণ্ডল সভাপতি হয়ে দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেননি। সাবেক কমিটির অধিকাংশ নেতা এলাকার উন্নয়ন ও রাজনীতি পূণরুদ্ধারে লতিফ বিশ্বাসের পক্ষে নেমেছেন।
পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, স্থানীয় সরকারের মেম্বরসহ যে কজন জনপ্রতিনিধি আছে লতিফ বিশ্বাসকে সমর্থন দিয়েছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানূর বিশ্বাস বলেন, এমপি মমিন মণ্ডল সবসময় নৌকার বিরোধিতা করেছেন। উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিলেন। জনগণ ও নেতাকর্মীরা লতিফ বিশ্বাসের প্রতি পাগল। এ কারণে আমরা তার পক্ষে আছি।
বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার বলেন, কিছু নেতা যারা লতিফ বিশ্বাসের পারসোনাল লোক তারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করছে। এতে নৌকার বিজয়ে কোনো প্রভাব পড়বে না।
অপরদিকে চৌহালী উপজেলার ৩ ইউপি চেয়ারম্যান নৌকার পক্ষে থাকলেও বাকি ৩ জন কাজ করছেন ঈগলের পক্ষে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন নৌকার পক্ষে।
তবে সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক সরকার এমপির বিরুদ্ধে সমন্বয়হীনতার অভিযোগে নিস্ক্রিয় রয়েছেন।
দলের সাবেক সভাপতি হজরত আলী ঈগল প্রতিকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ঈগলের পক্ষে কাজ করছেন ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক ডা. আবু বক্কার সিদ্দিক, দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু নজির মিয়া, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি মিয়ান বোরহান উদ্দিন, সহ-সভাপতি নূর মোহাম্মদ চৌধুরী সন্জু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার মুন্না, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য গণি মোল্লা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাহহার সিদ্দিকীসহ অধিকাংশ সিনিয়র নেতা। উপজেলার ৫০টিরও বেশি ওয়ার্ড সভাপতি-সম্পাদকও
স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।
চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন বলেন, দলের বেশ কিছু সিনিয়র নেতা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করায় কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই। তবে অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ তৃণমূলের কর্মীরা নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, জনগণ ও দলের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকেই ভোট দিতে চান। যেখানেই যাচ্ছি গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি।
নৌকার প্রার্থী আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, দলের একটা অংশ সারাজীবনই বিপক্ষে থাকবে। যারা সবসময়ই সুবিধাবাদী। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা, শেখ হাসিনার প্রতীক নৌকা, বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকা। যারা আওয়ামী লীগ করেন, তাদের নৌকার বাইরে যাবার সুযোগ নাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
এসএএইচ