ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সিরাজগঞ্জের তিন আসনে নির্ভার আ.লীগ, তিনটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা 

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৪
সিরাজগঞ্জের তিন আসনে নির্ভার আ.লীগ, তিনটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা 

সিরাজগঞ্জ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারণা জমে উঠেছে যমুনাপাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জে। জেলার ৬টি আসনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচার-প্রচারণায়।

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।  

জেলার তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও বাকি তিন আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হচ্ছে নৌকা প্রার্থীদের। এসব আসনে নৌকার পাশাপাশি মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঈগল প্রতীকের প্রচারণা চলছে সমান তালে। রয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রচারণায় বাধা, সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগও।  

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদরের ৫ ইউনিয়ন)
আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২। পুরুষ ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫, নারী ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট ২টি। কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৩টি। নিজেদের শক্ত ঘাঁটির এ আসনটিতে বরাবরের মতো এবারও নিশ্চিন্তে রয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী ও তার উত্তরসূরিরাই এখানকার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও শহীদ এম মনসুর আলীর নাতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় নৌকার টিকিট পেয়েছেন। শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। এখানে আরও তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- সাইফুল ইসলাম (জাসদ), জহুরুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি) ও সবুজ আলী (বিএনএম)।

সিরাজগঞ্জ-২ ( সদর ও কামারখন্দ)
জেলা সদরের এ আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০৭। পুরুষ ২ লাখ ২ হাজার ৭২১, নারী ২ লাখ ১ হাজার ৭৮৪ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট ২টি। মোট ভোটকেন্দ্র ১৪৫টি। মর্যাদাপূর্ণ আসনটি ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির দখলে ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম এমপি হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। নৌকা প্রতীক পেয়েছেন  ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জান্নাত আরা হেনরী। আসনটিতে আরও ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে শক্তিশালী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটাই নির্ভার জান্নাত আরা হেনরী। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন- আমিনুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি), আব্দুর রুবেল সরকার (জাকের পার্টি), সোহেল রানা (বিএনএম) ও সাদাকাত হোসেন খান বাবুল (ওয়ার্কাস পার্ট)।

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ):
চলনবিল অধ্যুষিত ১৫৩ ভোটকেন্দ্রের আসনটিতে ভোটার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৩। পুরুষ ২ লাখ ৮ হাজার ৪৬৩, নারী ২ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট রয়েছে ৫টি। এখানে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ডা. আব্দুল আজিজ। একাদশ নির্বাচনে দলের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে জয় লাভ করলেও এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ঈগল পাখি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সুইট। তিনি বিগত তিনটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আসনটিতে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ দুই প্রার্থী ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নুরুল ইসলাম উজ্জ্বল (স্বতন্ত্র), গোলাম মোস্তফা (বিএনএম) ও জাকির হোসেন (জাতীয় পার্টি)।

এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। কয়েকবার নৌকার মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি। এবার কোন বাধা না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এতে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।  ইনশাআল্লাহ ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হবো।  

সিরাজগঞ্জ-৪ ( উল্লাপাড়া)
আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪০। পুরুষ ২ লাখ ২৭ হাজার ১৪৮, নারী ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৪ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট ৮টি। ভোটকেন্দ্র ১৩৭টি। টানা দুবারের এমপি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। নৌকা প্রতীক পেয়েছেন নবম সংসদের এমপি মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি। এখানেও শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভারমুক্ত আওয়ামী লীগ। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন- হিল্টন প্রামাণিক (জাতীয় পার্টি) ও মোস্তফা কামাল বকুল (জাসদ)।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী)
১২৪ ভোটকেন্দ্রের আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১।  পুরুষ ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮২ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৭৯টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার সবচেয়ে আলোচিত আসনটিতে অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নৌকা। তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ আসনটিতে টানা দ্বিতীয়বার মনোনয়ন পেয়েছেন শিল্পপতি আব্দুল মমিন মণ্ডল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হন তার বাবা আব্দুল মজিদ মণ্ডল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মজিদ মণ্ডল অসুস্থ থাকায় ছেলে মমিন মণ্ডল মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, উন্নয়নের দিকে নজর না দেওয়া ও বিএনপি-জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠতে থাকে। এবারও তাকে নৌকা প্রতীক দেওয়ায় সাবেক ও বর্তমান একাধিক জনপ্রতিনিধিসহ দলের বড় একটি অংশ সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে স্বতন্ত্র দাঁড় করিয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন। বিভিন্ন অভিযোগের মধ্য দিয়ে জমজমাট প্রচারণা চলছে আসনটিতে। এই দুই প্রার্থী ছাড়াও আরও ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- নাজমুল হক (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), আব্দুল্লাহ আল মামুন (স্বতন্ত্র), ফজলুল হক (স্বতন্ত্র)  ও আব্দুল হাকিম (বিএনএম)।

এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফ বিশ্বাস বলেন, নির্বাচন করলে দলের কোনো বাধা নেই। যে কারণে জনগণ ও দলের চাপে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তৃণমূলের যত নেতাকর্মী আছে তারা প্রত্যেকেই আমাকে ভোট দিতে চান। যেখানেই যাচ্ছি গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি।  

নৌকার প্রার্থী আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, এখানে যিনি দীর্ঘদিন নৌকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন সবাইকে নিয়ে তিনিই নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। নেতাদের তিনি হতাশ করেছেন। তিনি মন্ত্রী হয়ে অনেক অপকর্ম ও দুঃশাসন করেছেন। এ কারণে সাধারণ মানুষ আজ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।   

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর):
তাঁত ও দুগ্ধশিল্প শাহজাদপুর উপজেলার আসনটিতে ভোটকেন্দ্র ১৬০টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৭৭, পুরুষ ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৫০, নারী ২ লাখ ২৪ হাজার ৬২৫ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট রয়েছে ২টি।  

এখানে বর্তমান এমপি মেরিনা জাহান কবিতার পরিবর্তে তার ছোট ভাই চয়ন ইসলাম নৌকার কাণ্ডারি হয়েছেন। আসনটিতে সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর ঈগল প্রতীকের সঙ্গে নৌকার হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা শোনা যাচ্ছে। এখানেও নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার, মারপিট ও হুমকির একাধিক অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এখানে আরও ৬ প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন- মোক্তার হোসেন (জাতীয় পার্টি), মোজাম্মেল হক (জাসদ), মোহাম্মদ শামীম (বিএনএম), তারিকুল ইসলাম (তৃণমূল বিএনপি), রেজাউর রশিদ খান (ওয়ার্কাস পার্টি) ও কাজী মো. আলামীন ( সুপ্রিম পার্ট)।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, এবার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে এবং তারা উন্নয়নের পক্ষে নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবে। জেলার ৬টি আসনেই নৌকা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।