ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রাজনৈতিক দুশ্চিন্তা নিয়ে মানুষ নতুন বছর শুরু করেছে। দেশটা গণতন্ত্রের জন্য দেশটা স্বাধীন করা হয়েছে।
সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) উদ্যোগে আয়োজিত 'প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন, প্রহসনমূলক ও ডামি নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ গণতন্ত্রের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, আজকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আজ নতুন বছর শুরু হয়েছে, দেশের ১৮কোটি মানুষ যে দুশ্চিন্তা (রাজনৈতিক পরিস্থিতি ) মাথায় নিয়ে তারা ভাবনায় রয়েছে, এটা জাতির দুর্ভাগ্য। তাত্ত্বিকভাবে আমরা বলি যে, দেশটা সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি স্বাধীনভাবে কথা বলবো, এজন্য। আজকে আমরা কোন বাংলাদেশে বাস করছি? কোথায় গণতন্ত্র? বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলাম, দেশে খুশী মতো কথা বলবো। যাকে খুশি তাকে ভোট দেবো। এটা তো আওয়ামী লীগেরই স্লোগান ছিল। কিন্তু এই স্লোগান তারা এখন আর দেয় না। তারা এখন দেয়, তোমার ভোট আমি দেব, সবার ভোট আমি দেব।
তিনি বলেন, নির্বাচন এরই মধ্যে হয়ে গেছে। ৩০০ আসনে কে কোথায় এমপি হবে, সেটা বাংলাদেশের জনগণ সবাই এখন জানে। ৭ তারিখে আমরা একটা ফলাফলের ঘোষণা শুনবো। কি সেলুকাস! এখনে সংসদের সিট ভাগবাটোয়ারা প্রকাশ্যে হয়।
নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এ সরকারের ওপর যারা আস্থা হারিয়েছে তারা ভোট দিতে যাবে না। আওয়ামী লীগের ভোটাররাও ভোট দিতে যাবে না। কারণ তাদের প্রার্থী তো জয়ী হয়েই যাবে।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে যদি গণতন্ত্র না থাকে তাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায় থাকলো? বাংলাদেশের মানুষকে পরম মোঘল সম্রাটেরাও বশ করতে পারেনি। ১৮ কোটি মানুষকে আওয়ামী লীগ বাকশালের রাস্তায় চালাবে তা হতে পারে না। অতীতেও একবার চেষ্টা করেছে, পারেনি।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশে একটা প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছে। ৭ তারিখে কোনো ইলেকশন হচ্ছে না, এটা মূলত সিলেকশন হচ্ছে। আগে থেকেই সবকিছু ঠিক করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশীয় সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করছে। এ সরকার গণতন্ত্র হরণ করেছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষ এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ৭ তারিখে ভোট দিতে যাবে না। পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার টিকেনি। এ সরকারও টিকবে না। আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি করছে। ৭ তারিখের নির্বাচন আওয়ামী লীগকে নির্বাসনে পাঠাবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালত ছয় মাসের জেল ঘোষণা করেছে। এটাকি বাংলাদেশের আইনের শাসনের একটি উদাহরণ? নাকি এ দখলকৃত রাষ্ট্রের সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নানাভাবে যে কাউকে জেলে ঢুকাবে, কাউকে হয়রানি করবে, এমনকি কাউকে গায়েব করে দেবে, এটি তারই একটি নতুন উদাহরণ।
তিনি আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা করে বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে দিয়েছে। এদের ক্ষমতা থেকে নামাতে হলে মানুষকে একত্র করে রাজপথে নামার সাহস সঞ্চার করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ সরকারের আমলে দেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ সরকারের আমলে মানুষের জান-মাল কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হতে হিসেবে কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকার ডামি প্রার্থী করে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকার দেশকে লুটেপুটে খাচ্ছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ শেখ হাসিনার হাতে জিম্মি হয়ে আছে। ৭ তারিখের নির্বাচন করে এ সরকার পার পেয়ে যেতে পারবে না।
জেএসডি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৪
এমকে/জেএইচ