যশোর: আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি- দুই দলই বিগত দিনে নিজ নিজ সরকারে বৃহত্তর যশোহর (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল) থেকে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে কাউকে না কাউকে মন্ত্রী করেছিলেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিগত টানা তিন সরকারে এ অঞ্চল থেকে মন্ত্রী করেছিল।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে যশোর-৩ আসন থেকে পরাজিত হয়েও টেকনোক্র্যাট কোটায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও মন্ত্রিসভায় রদবদল হলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে যশোর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত এ.এস.এইচ.কে সাদেককে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে যশোর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত তরিকুল ইসলামকে প্রথমে খাদ্যমন্ত্রী পরে মন্ত্রীসভায় রদবদলে তথ্যমন্ত্রী এবং ওই মন্ত্রীসভার ফের রদবদলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে যশোর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাবকে হুইপ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই সরকার আমলে ২০১২ সালে মন্ত্রী সভায় রদবদলে যশোর-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে আইসিটি মন্ত্রী এবং ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে নির্বাচিত আব্দুল হাইকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে যশোর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ.এস.এই.কে সাদেক পত্নী ইসমাত আরা সাদেককে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এবং মাগুরা-২ আসন থেকে নির্বাচিত বীরেন শিকদারকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে যশোর-৫ আসন থেকে নির্বাচিত স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু এবার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা ঘেঁষা গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, হুইপসহ কোনো ধরণের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সমালোচনা হচ্ছে। শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস, সরকারি অফিস আদালত থেকে শুরু করে ফুটপাতের চায়ের দোকানের আড্ডাতেও চলছে একই আলোচনা।
অনেকেই বলছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতি ও ভৌগলিক অবস্থানগত হিসেব কষলেও এ অঞ্চলের মানুষের এমন প্রত্যাশা পূরণ করা যৌক্তিক। এছাড়াও এই অঞ্চলের উন্নয়ন-রাজনীতিসহ সব বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করার মতো কেউ মন্ত্রীসভায় না থাকাটা উপহাস করার শামিল।
এ প্রসঙ্গে যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান বুলু বলেন, যশোর সবসময়ই বঞ্চিত। নতুন যে মন্ত্রিসভা গঠন হয়েছে সেখানে শুধুই যশোর জেলা নয়, বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলা মন্ত্রীশূন্য। এর আগেও যারা মন্ত্রী ছিলেন তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন না। আওয়ামী লীগ প্রতিবারই যশোর থেকে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে। সেই বিবেচনায় এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী রাখা প্রয়োজন।
সচেতন নাগরিক কমিটি যশোরের সভাপতি শাহীন ইকবাল বলেন, আমাদের যশোরাঞ্চল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে। আওয়ামী লীগ এ অঞ্চলে অধিকাংশ আসনে জয় পেয়েছে। সে তুলনায় মন্ত্রী পাওয়া উচিত। আমরা মনে করি সরকার বিষয়টির দিকে সুদৃষ্টি দেবে।
এ প্রসঙ্গে জনউদ্যেগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে অবহেলিত যশোরাঞ্চল। যশোর থেকে আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সবকটি আসন পেয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের অনেক দাবি রয়েছে সেগুলো অনেকটাই পূরণ হয়নি। যশোরাঞ্চলে সরকারের তাকানোর সময় আছে? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যশোরের যিনি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এবার স্বতন্ত্রের কাছে হেরে গেছেন। আমরা চাই একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। যিনি এই অঞ্চলকে গড়ে তুলবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জুবাইর ১৫, ২০২৪
ইউজি/এমজে