ঢাকা, শনিবার, ২০ পৌষ ১৪৩১, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

রাজপথে নেই আ.লীগ, নিস্তব্ধ কার্যালয়-সেরনিয়াবাত ভবন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
রাজপথে নেই আ.লীগ, নিস্তব্ধ কার্যালয়-সেরনিয়াবাত ভবন বরিশাল আওয়ামী লীগের কার্যালয়। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: আত্মগোপন আর কারাগারে থেকেই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন বরিশালের শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা। এক কথায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজপথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকলেও ছিল না আওয়ামী লীগের কেউ, যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকেই।

তবে নতুন সূর্যোদয়ের ভোরে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে ছাত্র-জনতার ক্ষোভের শিকার পুড়ে যাওয়া বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও সেরনিয়াবাত ভবন।  

অথচ বরিশাল নগরের সোহেল চত্বরস্থ নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি টানা এক যুগের বেশি সময় ধরে সরব ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় আর স্লোগানে। আবার নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদটি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বাগিয়ে নেওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ব্যতীত দলের অভ্যন্তরীণ মিটিং ও কার্যক্রম পরিচালিত হতো নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবন থেকে। সেই সঙ্গে সিটি মেয়রের পদে আসীন হওয়ার পর নগর ভবনের অনেক কাজও পরিচালিত হতো সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবনের পাশাপাশি সেরনিয়াবাত ভবনে। সবকিছু মিলিয়ে দলীয় কার্যালয়ের থেকেও গত অর্ধযুগে সেরনিয়াবাত ভবন ছিল সব থেকে বেশি সরব। যেখান থেকে নগরবাসীর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। এক কথায় গোটা বরিশালের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হতো সেরনিয়াবাত ভবন থেকে।  

তবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত পঞ্চম পরিষদে সিটি মেয়রের দায়িত্ব নিলে কালিবাড়ি রোডমুখী স্রোতে কিছুটা ভাটা লাগে। নগরের একক আধিপত্য দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাহিদ ফারুক শামীম বরিশাল সদর আসনে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হলে নগর কেন্দ্রিক সব কিছু তিনমুখী হয়ে যায়। আর এতে করে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। তারা কার কাছে যাবেন, কাকে কি বলবেন, কে রাগ হবেন, কে ভালোবাসবেন তা নিয়ে পড়ে যান দ্বিধা দ্বন্দ্বে। যদিও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সরকার পতন ঘটলে আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় এ থেকে পরিত্রাণ পায় নগরবাসী।  

নগরের কালিবাড়ি রোডের ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ৫-৬ বছর পর এখন স্বস্তিতে আছেন তারা। কারণ গত ৫-৬ বছরের বেশি সময় ধরে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার সব কার্যক্রম কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনের ভেতরে পরিচালিত করেছেন। আর এতে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নেতাকর্মীসহ মানুষের যাতায়াত ছিল কালিবাড়ি রোডে। এখানে তার নেতাকর্মীরা এমনভাবে তাদের মোটরসাইকেল রাখতো যে কালিবাড়ি রোডের কোনো ব্যবসায়ীর দোকানে ক্রেতারা সহসা প্রবেশ করতে পারতেন না। আর সড়কের দুই ধারে মোটরসাইকেল রাখায় সড়কটিতে সবসময় যানজটও লেগে থাকতো, ভয়েও এর প্রতিবাদ কেউ করতো না। ৫ আগস্ট সেরনিয়াবাত ভবনে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতারা আগুন দিলে সাদিকসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যান সেখান থেকে। আর এরপর থেকেই কালিবাড়ি রোডে সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলছে, এখন আর নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের পদচারণা, কোলাহল।  

একই অবস্থা বিরাজ করছে বরিশাল নগরের বিবির পুকুরের দক্ষিণ প্রান্তে। সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবনের নিচতলার পশ্চিম প্রান্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণতো হয়েছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়।  

স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি আগুন দেয়। আর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের কারণেই পুরো অ্যানেক্স ভবন পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণতো হয়েছে। এরপর থেকে এখান দিয়ে শুধু মানুষ যাওয়া আসা করে কিন্তু নেতাকর্মীদের পদচারণা নেই।  

রাসেল হোসেন নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, বিগত বছরগুলোতে শুধু নিজেদের মধ্যকার কোন্দল দেখেছে বরিশালবাসী। এর ফলে নানানভাবে আওয়ামী লীগের শোষণের শিকার হয়েছেন নগরবাসী। যা হয়তো কেউ খেয়ালই করেনি, কিন্তু ৪ ও ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ বলে দেয় মানুষ কতটা বিরক্ত ছিল তাদের ওপর। শুধু যে আওয়ামী লীগ অফিস কিংবা সেরনিয়াবাত ভবন তা নয়, নগরের বগুরা রোডে আমির হোসেন আমুর বাসভবন, বটতলা এলাকায় সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) জাহিদ ফারুকের বাড়ি, বিভিন্ন কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোও ধ্বংসস্তূপে পরিণতো হয়েছে। আর কোথাও এমনটা না হওয়া মানে বরিশালবাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া আর কারও ওপর চড়াও ছিল না।  

তিনি বলেন, এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বরিশালে নেই, সবাই আত্মগোপন করে দেশের অন্যত্র নয়তো ভারতে কিংবা অন্য দেশে আছেন। আবার যারা বরিশালে আছেন তারা বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম এর মতো কোনো না কোনো মামলায় কারাগারে আছেন।  

মেহেদি হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থীর মতে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কখনও ভাবেনি ২০২৫ সালের প্রথম দিন তাদের কারাগারে কিংবা আত্মগোপনে থাকতে হবে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেষ্টা করছেন নিজেদের স্বাভাবিক অবস্থান জানান দিতে, তাই নতুন বছরের শুভেচ্ছাসহ অনেক কিছুই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাচ্ছেন, কিন্তু এরা কেউ দেশে নেই, আর যারা দেশে আছে তারা চুপচাপ নিজেকে গণ রোষানল থেকে নিরাপদে রাখছেন। কারণ তারা জানে সাধারণ মানুষ তাদের ওপর বিরক্ত।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৫
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।